জুয়েল খাঁন,সিলেট জেলা প্রতিনিধিঃ
আইসিইউ সুবিধাসংবলিত বিশেষায়িত আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স সিলেটে পড়ে আছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজেও জায়গা পায়নি; প্রায় এক বছর ধরে আছে খোলা আকাশের নিচে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেড় কোটি টাকা দামের অ্যাম্বুলেন্সটি সরিয়ে হাসপাতালের দুটি অচল গাড়ির পাশে নিয়ে রাখা হয়েছে। এখানেও কোনো ছাউনি নেই।
এর আগে রাজশাহীতে একটি আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) অ্যাম্বুলেন্স দুই বছর এবং চট্টগ্রামে একই ধরনের আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স দেড় বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকার খবর প্রকাশ হয়েছিল প্রথম আলোতে। ওই দুটি অ্যাম্বুলেন্সই হাসপাতালের গ্যারেজে ছিল।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রাঙ্গণের এক কোণে সারিবদ্ধ গাড়ি। এর মধ্যে দুটি অ্যাম্বুলেন্স একেবারেই অচল। খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সেগুলোতে জং ধরেছে। তার পাশেই গতকাল দুপুরে রাখা হয় আইসিইউ সুবিধাসংবলিত অ্যাম্বুলেন্সটি। আগে প্রশাসনিক দপ্তরের একটি কক্ষের পাশে খোলা আকাশের নিচে ছিল এটি। সেখানে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় এই স্থানান্তরের ঘটনা ঘটে। আর তাতেই নতুন করে নজরে আসে অ্যাম্বুলেন্সটি। হাসপাতালের একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক বললেন, ‘এটি সবচেয়ে দামি অ্যাম্বুলেন্স। চালাইবার শক্তি নাই। তাই এক বছর ধরি অচল পড়ি আছে।’
হাসপাতালের যান পরিচালন শাখা সূত্রে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সটি গত বছরের ১৭ অক্টোবর বরাদ্দ দেওয়া হয়। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) অ্যাম্বুলেন্সটির ভেতরে উন্নত প্রযুক্তির পালস অক্সিমিটার, ইসিজি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ভেন্টিলেটর মেশিন, সাকার মেশিন, মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে। লোকবলের অভাবে এটি চালানো যায়নি।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটির ডান পাশে একটি গাড়ি রাখা। সেটির গায়ে ‘স্বেচ্ছা রক্ত সংগ্রহ কার্যক্রম (শীতাতপনিয়ন্ত্রিত)’ লেখা। ওই গাড়ির পাশে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স। দুটি গাড়িতেই জং ধরা। খোলা আকাশের নিচে রোদ–বৃষ্টিতে পড়ে থাকতে থাকতে গাড়ির রং বিবর্ণ। এ দুটি গাড়ির পাশে রাখা হয়েছে বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সটি। এরপর রয়েছে হাসপাতালের নির্ধারিত সাতটি অ্যাম্বুলেন্স। সেগুলো অবশ্য চলাচল উপযোগী। গাড়িগুলোর ওপরে কোনো ছাউনি নেই।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মচারীরা এসব গাড়ির নজরদারি করেন। দুপুর থেকে বিকেলের পালায় কর্মরত দুজন কর্মচারী বলেন, ওসমানী হাসপাতালের নিজস্ব পার্কিংয়ে মোটরসাইকেল রাখা হয়। গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তিনটি কক্ষ। সেখানে কর্মকর্তাদের গাড়ি রাখা হয়। অ্যাম্বুলেন্স রাখার গ্যারেজ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে।
আইসিইউ সুবিধাসংবলিত একটি অ্যাম্বুলেন্স সিলেটে আছে, এমন খবর অনেকেই জানেন না। সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা শুধু আইসিইউ শয্যা আর অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য প্রবাসীদের সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করেছি। ঠিক এই সময়ে এক বছর ধরে একটি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে! এটা চরম অরাজকতার উদাহরণ।’
জানতে চাইলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা কমিটির সদস্য ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি একটি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনার জন্য দুজন চালকের পাশাপাশি একজন চিকিৎসক ও নার্স দরকার হয়। লোকবল না পাওয়ায় চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
বরাদ্দ দেওয়ার প্রায় এক বছর পরও অ্যাম্বুলেন্স চলেনি—এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক বলেন, ‘একবারও চলেনি, কথাটা সত্য নয়। একবার চলেছে। গত মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে অ্যাম্বুলেন্সটি টুঙ্গিপাড়ায় প্রটোকলে গিয়েছিল। এরপর আর চলেনি। আমরা সম্প্রতি কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারসংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।’
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy