ফারহানা বি হেনা,
সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে তরুণীকে গণধর্ষণের মামলার ৭ আসামি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কোয়ারেন্টিনে আছেন। করোনাভাইরাসের কারণে নতুন সকল বন্দিকেই প্রথম ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখে কারা কর্তৃপক্ষ।
তবে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চালানো অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার মামলায় বর্তমানে ৩ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন সাইফুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ মামলার আসামিদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষে তাদেরকে নির্ধারিত ওয়ার্ডে দেয়া হবে। তবে কারাগারে থাকা ৭ আসামির সবার শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।
প্রসঙ্গত, ২৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৭ টার দিকে সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে এক তরুণীকে গণধর্ষণ করেছে মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। অভিযুক্ত এসব কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।
এদিকে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে এসএমপির শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিত ওই তরুণীর স্বামী মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতের হাকিম শারমিন খানম নিলার কাছে সেই রাতের ঘটনার জবানবন্দি দেন নির্যাতনের শিকার তরুণী। এসময় তিনি ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আর আদালত তরুণী জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
অন্যদিকে ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে সাইফুরকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে পৃথক এক অভিযানে একই দিন সকালে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা থেকে অর্জুন লস্করকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সাইফুর রহমান বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাই পাড়া গ্রামের বাসিন্দা তাহমিদ মিয়ার ছেলে আর অর্জুন জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রাম গ্রামের কানু লস্করের ছেলে।
এছাড়া একই দিন রাতে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব আর নবীগঞ্জ থেকে রবিউল ইসলামকে আটক করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি হবিগঞ্জ সদর থানার বাগুনীপাড়ার শাহ মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে আর রবিউল ইসলাম (২৫) সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানাধীন বড়নগদীপুর (জাগদল) গ্রামের বাসিন্দা।
অন্যদিকে রোববার দিবাগত রাত ১ টার দিকে গণধর্ষণের ঘটনায় রাজন নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯। এ সময় রাজনকে সহযোগিতায় করায় আইনুল নামের আরেক ব্যক্তিকেও আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রাজন তরুণীকে গণধর্ষণ মামলার অজ্ঞাত আসামি ছিল বলে জানা গেছে।
আর ২৮ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজের হোস্টেলে তরুণীকে গণধর্ষণ মামলার আরেক আসামি ছাত্রলীগকর্মী মাহফুজুর রহমানকে (২৫) জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সে এমসি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও কানাইঘাটের দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউপির লামা দলইকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সালিক আহমদ ছেলে।
অন্যদিকে ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি তারেককে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এরপর বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সাইফুর রহমান, রবিউল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ও রাজনের ডিএনএ টেস্টের জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়। আর শনিবার (৩ অক্টোবর) চাঞ্চল্যকর এ মামলায় তারেক ও মাহফুজুর রহমানের ডিএনএ টেস্টের জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলার সকল আসামিই ৫ দিনের রিমান্ড শেষে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।