প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ১২:০৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২, ২০২১, ৩:০৮ এ.এম
নিজস্ব প্রতিবেদক
সুচিকে গ্রেপ্তার করে মিয়ানমারের রাষ্ট্র ক্ষমতা সেনাবাহিনীর দখলে।
মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশের ক্ষমতা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইংয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর দখলে।
এর আগে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান অং সান সু চি, দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে সেনাবাহিনী। সোমবার সকালে অভিযান চালিয়ে এসব নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনএলডির মুখপাত্র মিও নিয়ুন।
গত কয়েকদিন ধরেই সু চির বেসামরিক সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তারপর থেকেই মূলত দু'পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। প্রথম থেকেই সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছে।
নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনেই মূলত সোমবার ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে দেশজুড়ে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
এনএলডির মুখপাত্র মিও নিয়ুন্ট জানান, সোমবার সকালের দিকে অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং বেশ কয়েকজন নেতাকে ‘তুলে নিয়ে’ যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি লোকজনকে বলব চটজলদি এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া না দেখাতে। আমি চাই সবাই আইন মেনে চলবেন। তিনি এএফপি নিউজকে বলেন, আমরা মনে করছি সেনা অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে।
সোমবার নব-নির্বাচিত সংসদের প্রথম বৈঠক হবার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী অধিবেশন স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। নিজেও আটক হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এনএলডির মুখপাত্র।
সোমবার সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোতে কোনো ফোন সংযোগ পাওয়া যায়নি। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন,‘দেশের প্রধান শহর ইয়াংগুনের সিটি হলের সামনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।’
এনএলডির এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সু চি ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হান থার মিন্ট রয়েছেন।’
গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি পার্টি ৮৩ শতাংশ আসন পায়। এই ঘটনাকে সু চির বেসামরিক সরকারের প্রতি সর্বসাধারণের অনুমোদন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০১১ সালে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় বার নির্বাচন ছিল। তবে সামরিক বাহিনী নির্বাচনের ফলকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা সুপ্রিম কোর্টে দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং ইলেক্টোরাল কমিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
সোমবার সকাল থেকেই রাজধানী নাইপিদো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। এছাড়া বড় শহরগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ‘টেকনিক্যাল সমস্যার’ কারণে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিওর সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের আটক করে জরুরি অবস্থা জারির নিন্দা জানিয়েছে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন বা গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টা আমেরিকা প্রত্যাখান করছে। যদি এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা না হয়, তাহলে আমরা অ্যাকশন নেব।’
অস্ট্রেলিয়াও এই সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, তারা এই গ্রেফতারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেইন বলেছেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীকে আইনের শাসন মেনে চলতে আহ্বান জানায়। যেসব রাজনৈতিক নেতাকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে, আমরা তাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি।’
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশের ক্ষমতা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইংয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর দখলে। এছাড়া আগামী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।