রংপুর ব্যুরো:
রংপুর বিভাগের সাংবাদিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার টাকা দ্বৈতপেশার দৈত্যের পকেটে ঢুকেছে। মূলধারার সাংবাদিকদের অনেকেই এই প্রণোদনার টাকা থেকে বঞ্ছিত। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন পেশাদার সাংবাদিকগণ। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দকৃত সহায়তা প্রণোদনার উদ্দেশ্য অনেকটাই ভেস্তে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদানের টাকা থেকে বঞ্ছিত হওয়ায় সাংবাদিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের সাংবাদিকদের জন্য প্রণোদনার বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা পৌঁছায়নি মূলধারার সাংবাদিকদের হাতে। চলে গেছে দ্বৈতপেশায় নিয়োজিত শিক্ষক-কাম সাংবাদিক ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের হাতে। রংপুর বিভাগের রংপুর জেলাতেও একই চিত্র পরিলক্ষিত। এর সাথে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা, এমপিওভুক্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এর সভাপতি, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসকের দপ্তর ও শিক্ষা বিভাগের উপজেলা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের পরিচালকদের উদাসীনতার কারণে এমন তুঘলকি কাজ ঘটেছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে রংপুর বিভাগে সাংবাদিকদের জন্য দেয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার জনপ্রতি ১০ হাজার টাকার মধ্যে প্রায় অর্ধেক টাকা সাংবাদিক পরিচয়ে শিক্ষক ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মরত কর্মচারীরা হাতিয়ে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের প্রায় শতাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ-এর কর্মচারীরা সরকারি চাকরী ও স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত বেতন-ভাতার বিষয়টি গোপন রেখে ফুলটাইম সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত অনেকেই। এমন অসংখ্য ব্যক্তির তথ্য ও জড়িত বিষয় স্থানীয় প্রশাসনে জানাজানি থাকলেও এ নিয়ে তারা কোন কথা বলতে নারাজ। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সাংবাদিকদের বিষয়ে নাড়াচাড়া কিংবা কোন ব্যবস্থা নিলে অনেক কর্মকর্তার অপকর্মের কথা ফাঁস হয়ে যাবে। এমন আশংকায় বিষয়টি এড়িয়ে যান। সেই টাকাতেও ভাগ বসিয়েছেন ফুলটাইম সাংবাদিকতায় যুক্ত এমন শিক্ষক ও সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারীরা।
উল্লেখ্য, ২৮ মার্চ ২০২১ খ্রিঃ শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এম.পি.ও. নীতিমালা ২০২১ প্রকাশ করা হয়। তাতে ১১.১৭ নম্বর কলামে সুস্পষ্টভাবে বলা হয় এম.পি.ও. ভুক্ত কোন শিক্ষক-কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোন পদে/চাকুরীতে বা আর্থিক লাভজনক কোন পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। এটি তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার তার এম.পি.ও. বাতিলসহ দায়ী ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে রংপুর বিভাগে ও রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় এভাবে সাংবাদিকতা পেশাকে পূঁজি করে অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন। এরা সকলেই নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজ নিজ পত্রিকা থেকে নিয়মিত বেতন ভাতাটি গ্রহণ করছেন। আবার সরকারি বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। এদের মধ্যে সিংহভাগই শিক্ষক-সরকারি কর্মচারী সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাংবাদিকতার পেশাকে পূঁজি করে রংপুর জেলায় প্রায় শতাধিক শিক্ষকসহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সরকারিভাবে শতভাগ বেতন-ভাতাসহ সকল অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন আবার পত্রিকা অফিসগুলো থেকে নিয়মিত বেতনভাতা গ্রহণ করছেন যা চাকরী বিধির পরিপন্থি। এ নিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চুপ থাকায় সাংবাদিকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এরা সাংবাদিকতার পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পর্যায়ের একজন শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রচলিত আইন-বিধিতে কোন শিক্ষক নিজ পেশায় থেকে সাংবাদিকতা বা লাভজনক কোন পেশায় যুক্ত হতে পারেন না। কিন্তু ভাই সাংবাদিকদের নিয়ে আমরা কিছু করতে চাই না। কারণ তাদের হাত বেশ লম্বা। এ নিয়ে যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ডিজি অফিসসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা আসে তখন আমরা তা প্রয়োগ করতে পারব।
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব রংপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি সাংবাদিক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আজ সাংবাদিকরা নানাভাবে অনৈক্যে থাকার ফলে, সংগঠন বিহীন মূলধারার সাংবাদিকরা পদে পদে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন, অপর দিকে তৈলমর্দনকারী কিছু সাংবাদিক কর্তাকে তৈল মর্দন করে আখের গুচ্ছাছ্নে।
মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ বলেন, যারা তৃণমূল পর্যায়ে সমাজের ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম দুর্নীতি, অনাচার-অবিচারের বিষয়বস্তু তুলে ধরে যে সাংবাদিকগণ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বির্নিমাণে কাজ করে যাচ্ছেন, সেই সমস্ত গণমাধ্যম কর্মীরা বরাবরেই সরকারি নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত গণমাধ্যম কর্মীদের এক কাতারে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
৯ মার্চ ২০২৩ রংপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক সাংবাদিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার টাকা মোট ২৯ জন গণমাধ্যম কর্মীর কাছে বিতরণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় সুবিধাবঞ্চিত মূলধারার অনেক সংবাদকর্মী প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার টাকা পায়নি তারা নতুন করে আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার টাকা পাবেন।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy