নিজস্ব প্রতিনিধি:
উত্তরা ১১ নং সেক্টর গরীবে নেওয়াজ রোডে ২০২০ সালের ২৮ জুলাই মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা স্বক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তরা আল-আশরাফ জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দি মেডিকেল প্র্যাকটিস এন্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ল্যাবরেটরীজ (রেজুলেশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা না করায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
ঐ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জনানো হয়, ২০ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন কমিটি উত্তরা আল-আশরাফ জেনারেল হাসপাতালটি সরেজমিন পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে তারা কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করে, সেগুলো হলো: প্রতিষ্ঠানটি হাসপাতাল কার্যক্রম, প্যাথলজি কার্যক্রম এবং রক্ত পরিসঞ্চালনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই। অনলাইন ডাটাবেজ যাচাই করে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স নবায়নের জন্য কোনো আবেদন করেনি। হাসপাতালের আইসিইউ অত্যন্ত নিম্নমানের। কোনোভাবেই এমন আইসিইউ পরিচালনা গ্রহণযোগ্য নয়। ল্যাবরেটরি পরিবেশও অত্যন্ত নিম্নমানের। অনুমোদনবিহীন ল্যাবরেটরীতে অবৈধভাবে রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাই দি মেডিকেল প্র্যাকটিস এন্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ল্যাবরেটরীজ (রেজুলেশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা না করায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গত ৫ মাস বন্ধ থাকার পর হাসপাতালটি জানুয়ারী ২০২১ সালে ১২ নং সেক্টরের সোনারগাঁ জনপথের কার্ডিও কেয়ার হাসপাতাল ভবনে কার্ডিও কেয়ার হাসপাতালের সাইন বোর্ডের পরিবর্তে আল আশরাফ জেনারেল হাসপাতালের সাইন বোর্ড দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে কৌতুহল শুরু হলে, হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাথে কথা হলে, তারা প্রতিবেদককে হাসপাতালটি ১১ নং সেক্টরের গরীবে নেওয়াজ রোড থেকে স্থানান্তরের কথা জানান।
হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রশ্ন করলে, হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি পরিচয় গোপন করে প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এ কথা আমরা কখনো শুনিনাই।
হাসপাতালটির রেজিষ্ট্রশন নবায়ন বিষয়ে জানতে স্বাস্থ অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখায় যোগাযোগ করলে জানানো হয়, হাসপাতালটি উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ২৭ গরীবে নেওয়াজ রোডের ঠিকানায় রেজিষ্ট্রিশন নবায়ন করা হয়েছে। রেজিঃ নং এইসএসএম- ২৭১৪৩।
হাসপাতালটি ২০০৪ সালে উত্তরা ৪ নং সেক্টরের ২১ নং রোডে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা অনিয়ম ও সেবা প্রার্থীদের সেবায় বিভিন্ন ক্রুটি, অবহেলা, মিথ্যাচার, মূহুর্ষ রুগীদের সাথে অযাচিত ব্যবহার ও বিল তৈরীতে হাতীর মূল্য দেখানোর কারনে কখনই জনপ্রিয়তা পায়নি। দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রুগী ভাগিয়ে এনে ভর্তি করে মোটা অংকের আদায়ই ছিল হাসপাতালটি পরিচালনার একমাত্র মাধ্যম। হাসপাতালটির এই বিষয়গুলোকে ফলোআপ করে বিভিন্ন স্যাটেলাই্ট ও আইপি টেলিভিশ, দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে শতাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। স্বাস্থ অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালটি বন্ধ না করার আগপর্যন্ত তাদের বিতর্কিত কর্মকান্ড বন্ধ করা যায়নি। গত বছর করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারনে দেশব্যাপি লকডাউন এর সময় বি বাড়িয়া জেলার নাসির নগর থানা এলাকায় টেডা যুদ্ধ মারামারিতে রাজিব নামের এক ছেলে মারাত্বক আহত হলে, তাকে স্থানীয় স্বাস্থ কম্পেলেক্স থেকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। ২১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে দালালরা রাজিবের পরিবারকে ভূল বুঝিয়ে রাজিবকে ঢাকা মেডিকেলে না নিয়ে আল আশরাফে নিয়ে আসে। ছেলেটি উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা যায় বলে মিডিয়ার সামনে তার বাবা- মা ও আত্বীয় স্বজন অভিযোগ করেন। কোন চিকিৎসা ছাড়াই কয়েক ঘন্টায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা বিল করার অভিযোগ করেন রাজিবের আত্বীয় স্বজন।