স্মরণ : আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী (ক:)
শাহাদাত হোসাইন
আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী (ক:) প্রকাশ আজিম ভান্ডার। যিনি জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন উপমহাদেশের প্রধান আধ্যাত্মিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র, মানবতাবাদী, অসাম্প্রাদায়িক ঐক্য এবং ইক ও পরলৌকিক সাধানার মূর্ত প্রতীক মাইজভান্ডার দরবার শরীফে। তিনি শৈশব থেকে আমৃত্যু কাটিয়েছেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফে। সংসার, পরিবার, সমাজ তাকে কখনো আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি ছিলেন মুর্শিদের প্রেমে ফানা। জীবনের ৬০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বিয়ে না করায় মাইজভান্ডার দরবার শরীফ থেকে আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী (ক:) বিয়ে করানো হয় আরেক আশেক ও আমৃত্যু মাইজভান্ডার দরবারে কাটানো আলমাস খাতুনের সাথে। তাদের একমাত্র সন্তান মরহুম আবদুর রশিদ। আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী (ক:) প্রকাশ আজিম ভান্ডারী বিয়ের পর মাত্র ৭ বছর জীবিত ছিলেন। ১৯৬০ সালে তিনি ইহ জগত ত্যাগ করেন।
আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী (ক:) মাইজভান্ডার দরবার শরীফের প্রাণ পুরুষ, ত্বরীকাতর প্রর্বতক , গাউসুল আজম শাহসুফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক:) ও ভ্রাতুষ্পুত্র গাউসুল আজম ইউসুফে সানী সৈয়দ গোলাম রহমান বাবা ভান্ডারী (ক:) দর্শনের সব ধরনের গোড়ামী ও মানবতা বিরোধী অশুভ শক্তির বিরোধে প্রতিষ্টিত অরাজনৈতিক ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের প্রানপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের মোহে আজম দেওয়ানা ছিলেন। তার সহায় সম্পত্তি কখনো আকৃষ্ট করেনি। যা মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে অকাতরে। তিনি ছিলেন গাউসুল আজম ইউসুফে সানী সৈয়দ গোলাম রহমান বাবা ভান্ডারী (ক:) খলিফা ও মুরশিদের প্রেমে ফানা । আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী (ক:) প্রকাশ আজিম ভান্ডারী রহমান মঞ্জিলে শৈশব থেকে আমৃত্যু ছিলেন। তিনি মুর্শীদের প্রেমে মুর্শীদের একান্ত সানিধ্য পেতে নিজেকে সোর্পোদ্দ করেছিলেন মাইজভান্ডারী দরবার শরীফে। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের প্রেমে ফানা হয়ে আমৃত্যু সেবা করেছেন। আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী নাতনী মহয়সী নারী কবি নুর মুহাম্মদ চৌধুরী সাহিত্যরত্মের সহধর্মীনি ও দেশের অন্যতম জেষ্ঠ্য সাংবাদিক নাসিরুদ্দীন চৌধুরীর মাতা মুরহুমা নুর জাহান বেগম বলেছেন, আমি শৈশবে আমার বাবা মাকে হারিয়ে পটিয়া থানা আশিয়ার গ্রামের মল্লা পাড়ায় আমার মামা ডাক্তার আবুল বাসার ও ততকালীন পটিয়ার প্রথম মুসলিম ম্যাজিটেট আবুল কাসেমের ঘরে অত্যন্ত আদর যত্নে লালিত পালিত হয়েছে। আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী ছিলেন সর্ম্পকে আমার নানা, তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন।
আবদুল আজিম মাইজভান্ডারীর সর্ম্পকে তার ভাগিনা পটিয়া থানার আশিয়া এলাকার ততকালীন প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাক্তার আবুল বাসার বলেছেন, আমার মামা আবদুল আজিম মাইজভান্ডারীকে যতদিন দেখেছি তিনি কখনো পটিয়া থানা বড়লিয়ার ওখ্যানারার খাঁন বাড়ীতে থাকতেন না। তিনি সারাজীবন থাকতেন মাইজভান্ডার দরবারে। বছরে দু-একবার আসলেও কখনো তিন চার দিনের বেশি থাকতেন না। আমি এবং আমার ছোট ভাই পটিয়ার প্রথম মুসলিম ম্যাজিটেট আবুল কাসেমকে মামা অত্যান্ত স্নেহ করতেন। বিশেষ করে আমার ছোট ভাই আবুল কাসেমকে ম্যাজিট্রেড বানানোর পিছেনে মামার অবদান ছিল অনেক। আমার ভাই আবুল কাসেম সর্বপ্রথম ম্যাজিট্রেড হয়ে চাকুরিতে যোগদান করেন আমার মামা আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী তা শুনে অত্যন্ত খুশি হয়ে লুঙ্গি পড়ে ভাগিনাকে দেখতে যান তার অফিসে। আমার ছোট ভাই মামার এইধরনের যাওয়া পছন্দ না করে ওনাকে বলে ফেলেন মামা ভাগনার সর্ম্পক বাড়ীতে অফিসে না। এই কথা শুনার সাথে সাথে মামা পটিয়া আমাদের বাড়ীতে চলে আসেন। মামার চোখে পানি দেখে আমি ছোট ভাইয়ের সাথে কিছু হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে কোনো কিছু না বলে শুধু বলেন আমার ভাগিনা ভালো অবস্থানে আছেন। তবে কতদিন থাকতে পারবে তা জানিনা। একথা বলার পর আমি বুঝতে পেরেছিলাম মামার ছোট ভাইয়ের কিছু একটা হয়েছে। ওইদিনই মামা মাইজভান্ডার দরবার শরীফে চলে যান। এই ঘটনার ঠিক ১ সপ্তাহ পর আমার ছোট ভাই জজ সাহেবকে ফাইল ছুড়ে মারেন। এতে ওইদিনই তার চাকরি চলে যান। জীবনে যতদিন বেঁচে ছিলেন আর কখনো কোনো চাকরি পান নি ও করতে পারেননি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত সে অত্যন্ত কষ্টে ও অবহেলায় জীবন অতিবাহিত করেছেন।
আবদুল আজিম মাইজভান্ডারীর সর্ম্পকে তার ভাগিনা আবুল কাসেম বলেন, আমার মামার মৃত্যুর সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। ওনার মৃত্যুর ১ সপ্তাহ পর আমি যখন বাড়ীতে আসছিলাম তখন আশিয়া ও বড়লিয়ার সংযোগ সেতুর মুসলিম খা পুলের গোড়ায় আসি তখন দেখতে পাই আমার মামা সাম্পান যোগে চলে যাচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করাতে ওনি যানান আমি মাইজভান্ডার দরবার শরীফ যাচ্ছি। উল্লেখ্য সে সময় নদী পথে মাইজভান্ডার দরবারে চলাচল করত সবাই। এই দৃশ্য দেখার পর আমি বাড়ীতে পৌছালে সবাই আমাকে বলেন তুমি কি জানতে না তোমার মামা মারা গিয়েছেন? তুমি কোথায় ছিলে ১ সপ্তাহ? আমি প্রশ্ন করলাম মামা কখন মারা গিয়েছেন? আমি একটু আগেই দেখলাম মামা সাম্পান যোগে মাইজভান্ডার দরবার যাচ্ছেন। মামা নিজেই আমাকে কথাটা বলেছেন। তখন সবাই বলে তোমার মামা ১ সপ্তাহ পূর্বে মৃত্যু বরণ করেছেন। একথা শুনার সাথে সাথে আমি হতবম্ভ হয়ে যায়। আাজিম ভান্ডারী সম্পর্কে বরলিয়া নিবাসী তাহার ভাইপো জানান আমার চাচাকে আমরা ছোটবেলা থেকে কখনও বাড়িতে দেখতাম না তিনি মাইজভান্ডার দরবারে থাকতে বছরে দুই একবার আসলেও হুট করে চলে যেতেন। আমাদের ছোট কালে আমাদের বাড়িতে আমার মা দাদিরা একা বাড়িতে ভয় পেতে ও আমাদের এখানে সব সময় চুরি হত এটা আমার চাচা আজিম ভান্ডারী শুনে বলেছিলেন তার মৃত্যুর পারে তার কাটিয়া বাড়ির চারদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যায় তাহলে আর ভয় পাবে না ও চুরি হবে না কেয়ামত পর্যন্ত। ওনার মৃত্যুর পরে কাটিয়া বাড়ির চারপাশে ঘুরিয়ে নেওয়া হয় এরপর থেকে কখনও কেও ভয় পায়নি চুরি ও হয়নি। আবার বড়লিয়া এলাকায় এক ১৬ বছরের ছেলেকে সাপে কাটে এমন পরিস্থিতি হয় সবাই ছেলেটি মারা গেছেন ভেবে গোসলের জোগাড় করে এই খবর আবদুল আজিম মাইজভান্ডারি শুনে তিনি ছেলেটির বাড়িতে ছুটে গেলে তিনি ছেলেটির গায়ে দিয়ে বলেন ও বেঁচে আছে এর কিছু সময় পর ছেলেটি উঠে দাঁড়িয় ও সুস্থ হয়ে যায়।
এইরকম আরো বহু কেরামত আবদুল আজিম মাইজভান্ডারি প্রকাশ পায়। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া থানা বড়লিয়ার ওখ্যানারার খাঁন বাড়ীতে জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ইহ জগত ত্যাগ করে খোদার স্বানিধ্যে চলে যান। ওখ্যানারার প্রাচীনতম খাঁরপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। র্দীঘ এতো বছর পরও উক্ত কবরস্থানে আবদুল আজিম মাইজভান্ডারীর কবর অন্যান্য কবরের চেয়ে একটু উচুতে দাড়িয়েবদুল আজিম মাইজভান্ডারী জন্ম কত সালে তা সঠিক ভাবে জানা না গেলেও আছে। তার সহধর্মীনি আলমাস খাতুনের জন্ম চট্টগ্রামের সাতখানিয়া থানার ডলুখাল সংলগ্ন গ্রামে হলেও সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফে। মাইজভান্ডার দরবার শরীফ থেকে আবদুল আজিম মাইজভান্ডারী ও আলমাস খাতুনকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়। আলমাস খাতুনও স্বামীর মৃত্যুর পর বেশি দিন জীবিত ছিলেন না।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy