ডেস্ক: চীন সরকারের রোষানলে থাকা হংকংয়ে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে সেখানকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছে এখন থেকে রাজনৈতিক গান, স্লোগান, পোস্ট ও ক্লাস বয়কট করতে পারবে না শিক্ষার্থীরা।
গত বছর থেকে হংকং জুড়ে চলা গণতন্ত্রকামী আন্দোলনে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে তাদেরকে অনেকবার মুখোমুখি অবস্থানে দেখা গেছে। সহিংস বিক্ষোভে জড়ানোর দায়ে শিক্ষার্থীদের প্রায় ১,৬০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গণতন্ত্রকামী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে হংকংয়ে বুধবার থেকে ছাত্র রাজনীতিই নিষিদ্ধ করা হলো। হংকং সিটিতে চীনের নিরাপত্তাবাহিনীর নতুন অফিস খোলার দিন এই ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি চীনের পার্লামেন্ট নতুন হংকং নিরাপত্তা আইন পাস হয়। এ আইনের আওতায় হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কর্তৃপক্ষকে অবমাননা, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
এই আইনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে হংকংবাসী। তাদের দাবি, এই আইনের মাধ্যমে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিচ্ছে চীন।
তবে চীনের দাবি অস্থিরতা প্রশমন এবং ব্যাপক গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা সামাল দিতেই এ আইন প্রয়োজন। ১ জুলাই থেকে কার্যকর এই আইন হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের জন্য হুমকি নয়।
উল্লেখ্য, ‘এক দেশ, দুই নীতি’ চুক্তিতে ১৯৯৭ সালে উপনিবেশ হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তর করেছিল যুক্তরাজ্য। তাতে শর্ত ছিল চীনের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার নিশ্চয়তা পাবে হংকং। কিন্তু অঞ্চলটির ওপর দিন দিন বরং কড়াকড়ি আরোপ করে যাচ্ছে চীন সরকার।
তাতে পশ্চিমা মদদপুষ্ট হংকংয়ে গণতন্ত্রকামী আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে। সে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আন্দোলনকারীদের ওপর নানা নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে চীন।
নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের ফলে প্রতিবাদের উপায় হিসেবে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে হংকংয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের ‘গ্লোরি টু হংকং’ গানটি এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। হংকংয়ের সহিংসতা ও নিপীড়ন নিয়ে সাজানো হয়েছে গানের কথাগুলো।
এই ধরনের প্রতিবাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবশ্যই বন্ধ করার কথা জানালেন হংকং সরকারের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী কেভিন ইয়ুং। ‘গ্লোরি টু হংকং’ গানটি নিয়ে তিনি বলেন, “এটা মাসের পর মাস ঘটে যাওয়া সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা, সহিংসতা ও অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের এটা চালানো, গাওয়া বা সম্প্রচার করতে দেওয়াটা উচিত নয়।”
নতুন ঘোষণায় কোনো ধরনের রাজনৈতিক স্লোগান ধরা, মানববন্ধন করা বা রাজনৈতিক অন্যান্য কার্যকলাপ চালাতে শিক্ষার্থীদের মানা করা হয়েছে।