হলুদ তরমুজ চাষে সফল মৌলভীবাজারের আব্দুল মতিন
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গ্রীষ্ম মৌসুমে হলুদ তরমুজ চাষ করে অভাবনীয় সাফল্যের দেখা পেয়েছেন কৃষক আব্দুল মতিন। তার এ সাফল্যে বিস্মিত খোদ কৃষি বিভাগ। রসালো ও সুস্বাদু ফল হিসেবে তরমুজের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। এছাড়াও গরমের সময় শরীরে পানি শূন্যতা রোধে তরমুজের জুড়ি নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এবং লাল তীরের সার্বিক সহযোগিতায় গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্রাকবেবি, মধুমালা ও হলুদ রঙ্গের লালতীর এর ল্যান্ড ফাই জাতের হলুদ হাইব্রিড তরমুজ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক আব্দুল মতিন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগান সংলগ্ন দুই বিঘা জমিতে উন্নত ব্রাকবেবি, মধুমালা ও হলুদ রঙ্গের লালতীর এর ল্যান্ড ফাই জাতের তরমুজগুলো সুন্দরভাবে বাশের মাঁচার নিচে ঝুলছে।
তরমুজ চাষে তার সাফল্য দেখে খোদ কৃষি বিভাগই বিষ্মিত। এলাকার অনান্য কৃষকদের মধ্যেও সাড়া জাগিয়েছেন তিনি। আব্দুল মতিনের বাম্পার ফলনে কৃষি বিভাগ এই উচ্চ ফলনশীল তরমুজের বীজ অনান্য উপজেলায়ও বিস্তার ঘটানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
বীজ রোপনের ৬৭ দিনেই গাছে ফল ধরে খাওয়ার উপযোগী হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে আব্দুল মতিন রসালো ও সুস্বাদু এ ফল বাজারজাত করা শুরু করেছেন।
তিনি জানান, তিন জাতের মধ্যে হলুদ রঙের লালতীরের হাইব্রিড, ল্যান্ড ফাই জাতটি সর্বাধিক ফলন হয়েছে। ফলের ওজন এবং আকারে সবাইকে আকর্ষণ করেছে। শুধু আকার নয় এর স্বাদও অসাধারণ। মধুর মতো মিষ্টি। বাজারে এর দামও ভালো পাচ্ছেন। এই তিনজাতের তরমুজ চাষ করতে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। মাঠে যে পরিমাণ তরমুজ রয়েছে এতে তিনি আরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী। ল্যান্ড ফাই জাতটির ফলন অন্যান্যদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি এবং ফলের ওজন এক একটি ৩ থেকে ৪কেজি এবং ফলে মিষ্টির পরিমাণও অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক গুণ বেশী। তাই আগামিতে তিনি ব্যাপকভাবে এই জাতের তরমুজ চাষ করবেন বলে জানান।
ইতোমধ্যে আব্দুল মতিনের তরমুজ ফলন দেখতে তার জমি পরিদর্শন করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকসহ স্থানীয় আশপাশের কৃষকরা। তারাও আগামীতে ব্যাপকভাবে এজাতের চাষ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এই প্রদর্শনীর বীজ এর উৎস প্রতিষ্ঠান লালতীর সীড লিমিটেড এর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক তাপস চক্রবর্তী জানান, হাইব্রিড, ল্যান্ড ফাই জাতটি সবুজ ডোরাকাটা ও ভিতরে হলুদ রঙ্গের শাসযুক্ত, অধিক মিষ্টি। উত্তম পরিচর্যায় একেকটি তরমুজ এর ওজন হয় ৫ থেকে ৬ কেজি। সারা বছরব্যাপী মাচায় ও মাঠে চাষ করা যায়। এ ফলের পরিপক্বতার সময় আসে ৬৫ থেকে ৭০দিনে। জাতটি চাষ করতে প্রতি শতকে বীজের পরিমাণ লাগে মাত্র ১ গ্রাম। উত্তম পরিচর্যাতে একরে ফলন উৎপাদন হয় ৩০ থেকে ৩৫টন। কৃষকরা উপযুক্ত দাম পেলে এই জাতগুলো চাষে দিন দিন আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, এ প্রদর্শনীতে তিন জাতের বীজ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে অধিক ফলনও ফলের মিষ্টতার পরিমাণেও সবদিক থেকে এগিয়ে কৃষকের মন জয় করেছে হাইব্রিড, ল্যান্ড ফাই জাতটি।
তিনি বলেন, জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও এমনি কৃষকদের মাঝে এই জাতগুলোর চাষ ছড়িয়ে দিতে চান যেন, কৃষকরা উচ্চ মূল্যের ফল এবং সবজি চাষ করে অধিক লাভবান হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘এটি একটি উচ্চ মূল্যের ফসল কৃষকরা চাষ করলে সহজেই অল্পদিনে অধিক লাভ করতে পারবে। বীজ রোপনের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই ফল পরিপক্ব হয়।এবছর অধিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে কোন রোগ-ব্যধির প্রাদুর্ভাব ছিল না। আশাকরি আগামী বছর এই জাতের তরমুজ চাষ আরো বাড়বে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।’
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy