যদিও সপ্তাহখানেক আগেও ওই সড়কে নিম্নমানের ও নিয়মবহির্ভূত খোয়া ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর ইউএনও কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের তুষভান্ডার (রাজবাড়ি রোড) থেকে দলগ্রাম (খোকা চেয়ারম্যানের বাড়ি) পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ ফুট প্রস্থের সড়কটি সংস্কারের কাজ পান ‘বিনিময় ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি যৌথভাবে তা কিনে নেন জেলার দুই জন ঠিকাদার। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের আওতায় তুষভান্ডার-দলগ্রাম রাস্তা সংস্কারের কাজটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর (এলজিইডি)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকবার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ সামছুজ্জামানকে মৌখিক অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি।
সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে আসেন কালীগঞ্জের ইউএনও রবিউল হাসান। সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত খোয়ার থিকনেস কমসহ নানান অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সড়ক সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশসহ উপজেলা প্রকৌশলীকে সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই ইউএনওর নির্দেশনা না মেনে আবারো নিম্নমানের সামগ্রীসহ একাধিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। তাদের পাশাপাশি এলজিইডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ওঠে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, হাত দিয়ে টানতেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, রাস্তার কাজ সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। যেভাবে কাজ করেছে সেটাকে কাজ বলা যায় না। নিম্নমানের আলকাতরা (বিটুমিন) ব্যবহার করায় সেগুলো এখন উঠে আসছে।
ওই এলাকার মোসলেম উদ্দিন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, রাস্তার কাজের ব্যাপারে আমরা কিছু বললেই ঠিকাদারের লোকজন আমাদের ওপর উল্টো রাগ দেখায়। আর এভাবেই সরকারের টাকা নষ্ট হচ্ছে। তারা নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে কার্পেটিং করতে না করতেই তা উঠে যাচ্ছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঠিকাদারের প্রতিনিধি মাসুদ রানা ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, সড়ক সংস্কারের কাজটি পেয়েছে বিনিময় ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে কিনে দুই জন ঠিকাদার যৌথভাবে কাজটি করছেন। নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ করার কারণে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সময় কাজটি করায় কিছু অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। এগুলো আবার ঠিক করে দেয়া হবে।
কাজটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান শুক্রবার বিকেলে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার হয়নি দাবি করে ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, নতুন কার্পেটিংয়ে হাত দিয়ে টানলে সেটি উঠে আসবেই। দুই থেকে তিন দিন পর তা আর উঠে আসে না। পরে ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ সামছুজ্জামান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, তিনি নিজে একবার গিয়ে নিম্নমানের কাজের প্রমাণ পাওয়ায় তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিম্নমানের কাজ প্রমাণিত হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।