তৌহিদ আহমেদ রেজা:
আজ জাতীয় শোক দিবস ১৫ই আগষ্ট ,এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার। শোকে সিক্ত শোকাবহ রক্তাক্ত ভয়াল একটি দিন, সেই ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫। জাতীয় শোক দিবস। যা বাঙালী জাতির জন্য সবচেয়ে ঘৃণিত ও কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী,স্বাধীনতার মহানায়ক,বাংলার অবিসংবাদিত নেতা,বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম নৃশংসভাবে হত্যা করে। জাতির কপালে মেখে দেয়েছিল কলঙ্কের কালী । ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মধ্যে দিয়ে জনগনের অধিকার হরণ করার পায়তারা করেছিল এই কুচক্রি মহল। তারা ধ্বংস করতে চেয়েছিল সংবিধান, গণতন্ত্র, মানবতা, সংস্কৃতি, উন্নয়নসহ দেশের বৃহত্তর অর্জনগুলো। শুধু তাই নয়, এই মহানায়কের খুনিরা দেশে-বিদেশে দম্ভ করে বলেছিল যে,এই অস্ত্র দিয়ে মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করেছি। তখন প্রতিবাদ করার মত অনেক নেতা থাকলেও সেদিন অনেক নেতাই তখন মুখ খুলেনি বা প্রতিবাদ করার মত সৎ সাহস দেখাতে পারেনি। লেজ গুটিয়ে ঘরে বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। আজ অনেক নেতা মুখে বড় কথার বুলি শুনতে হয়। সেদিন প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ বারী সুফি শহীদ হন। দুর্ভাগ্য বশত; তার মায়ের কাছে লাশও ফেরত দেয়নি ঘাতকরা। বেঁচে থাকলে আজ তার মায়ের করুণ মৃত্যু হতনা। কই আজ পর্যন্ত কোন নেতাকেই তো তার পরিবারে কোন খবর নিতে দেখিনি ।
দেশে থাকলে হয়ত আজকের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহেনা কেউ বাঁচতে দিতনা ঐ ষড়যন্ত্রকারীরা। রাখে আল্লাহ্ মারে কে ! বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের টানা তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার সাথে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে,আমি নিজ কানে শুনেছি, দেশবাসী সকলে জানেন. বিভিন্ন সভা সমাবেশে তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘আমার আর কিছু হারাবার কোন ভয় নেই,আর কিছু পাওয়ার কোন আশা নেই’ আমি যা হারিয়েছি তার থেকেও বেশী আমি বাংলার মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সবসময় সুস্পট কথা বলে থাকেন। মাঝে মধ্যে তিনিও অনেক ঘাত প্রতিঘাতের স্বীকার হয়েছেন এবং এখনও হচ্ছেন । আগষ্ট যখনই আসে বুকের মাঝে একটা নাড়া দিয়ে ওঠে আবার বুঝি দেশে কি যেন ঘটছে ! আগষ্ট মানেই বাঙালী জাতির রক্তে রাঙানো শোকাবহ সেই আগষ্ট,১৯৭৫ সাল।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাঙালী জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার করে ক্ষ্যান্ত হয়নি ঘাতক চক্র, ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী আইভি রহমান সহ ২৪ জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করে ঘাতক চক্র । মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবাণীতে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আজকের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় কালো অধ্যায় । সেই দিন ঘাতকের বুলেটে নির্মম ভাবে শহীদ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,সহধর্মীনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, ৯ বছরের শিশু শেখ রাসেল, পারভিন জামাল, ছোট ভাই শেখ নাসের, শেখ ফজলুল হক মনি, বেগম আরজু মনি, সুলতানা কামাল, কর্নেল জামিল আহম্মেদ,আঃ রব সেরনিয়াবাদ, বেবী সেরনিয়াবাদ, আরিফ,নিকট আত্মীয় বাবু। দেরিতে হলেও সত্য যে,বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, কিছুটা হলেও বাঙালী জাতির দীর্ঘশ্বাস এবং কলঙ্কময় অধ্যায়ের আংশিক শেষ হয়েছে। বাকী খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারলে বাঙালী জাতি কলঙ্ক মুক্ত হবে। তার কারণ খুনি যেই হোক তার সঠিক বিচার হবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্বাধীনতার স্বপ্ন সাধ এখনও পূরণ হয়নি। এখনও অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করে, রিকশা চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্বাধিনতা বিরোধী, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা,স্বাধিনতার সময় অনেকের জন্ম হয়নি বা কারো বয়স পাঁচ/সাত বছর, তারা আজ মুক্তিযুদ্ধের সকল সুবিধা ভোগ করে বিলাশ বহুল জীবন যাপন করছে। আজকে বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় এই ধরনের অপ্রীতিকর পরিবেশ দেখতে হতো না।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে। আর যেন কোন মায়ের সন্তান হারানো বুকফাটা আর্ত¥নাদ শুনতে না হয়। আর কোন সন্তানকে যেন তার বাবা হারানো বেদনা সইতে না হয়। শোককে শক্তিতে রুপান্তর করে বঙ্গবন্ধুর সুখি সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।
বাঙালী জাতীর ইতিহাসে বাংলাদেশ যতদিন থাকবে বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ নেতৃত্বের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস ততদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র সাধারণ নির্বাচন,৬২’র শিক্ষা আন্দোলন,৬৬’র ছয়দফা,৬৯’র গণঅভ্যুথান এবং ৭০’র নির্বাচনের পথ পেড়িয়ে বাঙালী জাতি উপনিত হয় ৭১’র ৭ই মার্চের মিলন মোহনায় । তৎকালিন রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বাঙালীর মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধুর বর্জকন্ঠের দৃপ্ত ঘোষনা “ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” । যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা,গৌরী যমুনা বহমান ,ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। আজ জাতীয় শোক দিবসের শোককে শক্তি পরিনত করে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার গড়ার গুরুদায়িত্ব দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যহৃত রাখতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে একযোগে কাজ করার মানুষিকতা নিয়ে পাশে দাড়াতে হবে। তাহলে আমাদের মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy