ডেস্ক রিপোর্ট | শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট
সাদা বলের সুপারহিট তারকা শহিদ আফ্রিদি মনে করেন তার ‘ আনপ্রেডিক্টেবল’ দেশটি দ্বিতীয়বারের মত টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের জন্য ২০০৯ সালের চেতনায় উদ্ভাসিত হতে পারে।
১২ বছর আগে সেমি-ফাইনালে দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৭ রানের জয় পাওয়া পাকিস্তান দলের হয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন আফ্রিদি। ম্যাচে ৫১ রান করেন এই অল রাউন্ডার। আর লর্ডসের অনুষ্ঠিত ফাইনালে শ্রীলংকার বিপক্ষে আট উইকেটের জয়ে তারকা দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন আফ্রিদি।
সফরকারী শ্রীলংকা দল বহনকারী বাসে জঙ্গী হামালার মাত্র তিন মাস পর প্রেরনাদায়ী ওই জয় লাভ করেছিল পাকিস্তান। অথচ লাহোরের ওই ঘটনায় দেশটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজন থেকেই নির্বাসিত হয়ে পড়ে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে আফ্রিদি বলেন, শ্রীলংকার সঙ্গে ওই ঘটনাটি আমাদের হৃদয়ে গেথে গিয়েছিল। গোটা জাতি ব্যর্থ ও হতাশ হয়ে পড়েছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ওই জয়টি খুবই প্রয়োজন ছিল। ওই জয়টি গোটা জাতিকে ফের আনন্দ ফিরিয়ে দিয়েছে। এনে দিয়েছে অবিষ্মরনীয় কিছু মুহূর্ত।
১৯৯৬ সালে আফ্রিদি প্রথম বিশ্ব ক্রিকেটের নজর কাড়েন তার টর্নেডো ইনিংস দিয়ে। মাত্র ৩৭ বলে সেঞ্চুরি হাকিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে পূর্বের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলেন তিনি। ওই রেকর্ডটি অক্ষত ছিল ২০১৪ সাল পর্যন্ত।
পাকিস্তানের হয়ে ৯৯টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে অংশ নেয়া আফ্রিদি মনে করেন, সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে অনুপ্রাণীত করতে পারে বাবর আজমের দলকে।
মেগা এই ইভেন্ট শুরুর মাত্র এক মাস আগে পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ মিসবাহ-উল-হক ও বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনুস। ধারণা করা হচ্ছে বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রমিজ রাজা তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন।
এরপর রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিট আগে ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানায় সফরকারী নিউজিল্যান্ড। তিনদিন পর ইংল্যান্ড তাদের পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরসুচি বাতিল করে।
আফ্রিদি বলেন, এটি পাকিস্তানের ক্রিকেট, যা কখনো আপনাকে নিস্তেজ করবে না। বিশ্বের যে কোন দলকেই চমকে দিতে পারে পাকিস্তান।
২২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আফ্রিদি ছিলেন পাকিস্তানের সিমিত ওভারের ‘টপসি-টার্বি’ ক্রিকেটের কেন্দ্রবিন্দুতে।
২০০৭ সালে দক্ষিন আফ্রিকায় টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী আসরে আফ্রিদি বলতে গেলে একক প্রচেষ্টাতেই পাকিস্তান দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। ১২ উইকেট দখল করা এই অল রাউন্ডার পান টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার।
তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে দুইবার পরাজিত হয়েছে পাকিস্তান। তন্মধ্য্যে একটি ছিল ফাইনালে। আফ্রিদি বলেন, টি -২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পাকিস্তান সেরা বিনোদন দিয়েছে। ভারতের কাছে গ্রুপ ম্যাচে আমরা হেরে গিয়েছিলাম বোল্ড আউট হয়ে, এটি ছিল আমাদের কাছে একেবারেই নতুন কিছু।
পরে ফাইনালে পাকিস্তান হেরে গিয়েছিল মিসবাহ উল হকের ব্যর্থতায়। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে একটি মারাত্মক শটে ব্যর্থ হয়ে। অথচ শেষ ওভারে জয়লাভের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ছয়টি রান।
আফ্রিদি বলেন, মিসবাহ পাকিস্তানকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন এবং তার ব্যর্থতায় আমরা একেবারেই জয়ের খুব কাছে গিয়ে হেরে গেছি।
আফ্রিদির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান হেরে যায় ২০১০ আসরের সেমি-ফাইনালে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে মাইকেল হাসি শেষ দুই ওভার থেকে তুলে নেন ৩৯ ওভার। এতেই অপ্রত্যাশিত এক জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
আফ্রিদি বলেন, আমাদের আচরণের সঙ্গে টি-২০ ক্রিকেট বেশ মানানসই। এই ফর্মেটে আমাদের যেমন প্রতিভা রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রয়োজনীয় দৃস্টিভঙ্গি ও আগ্রাসন। এটি এমন একটি ফর্মেট যেটি গোটা পাকিস্তানে জনপ্রিয়। আমরা সবগুলো দেশকেই হারিয়েছি এবং পরে আমাদের দেখে দেশগুলো এই ফর্মেটে মানিয়ে নিয়েছে। এখন বোলিং কৌশলে বৈচিত্র এসেছে, ব্যাটিংয়ে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন কৌশল।
আফ্রিদি মনে করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তান আরেকবার সবাইকে চমকে দিতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের বর্তমান দলটির অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকলেও প্রতিভার কোন অভাব নেই। তাই যেটি আমরা বলে থাকি, পাকিস্তানকে কখনো হাল্কা ভাবে নেবেন না।