প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ৭:৩০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১৩, ২০২০, ১২:৪৫ পি.এম
শহিদুল ইসলাম সোহেল স্টাফ রিপোর্টারঃ
স্বাধীনতার পর ৫৯ বছর পার হতে চললেও কোন প্রকার উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি মধুপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত অবহেলিত জনপদ গারোহাটের।
মিলেছে প্রতিশ্রুতি অসংখ্যবার। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বৃটিশ শাসনামলে স্থাপিত এ গারোবাজার উন্নয়নের প্রধান বাধা ভৌগোলিক বৈষম্য, রাজনৈতি প্রতিহিংসা, বর্ণচোরা নেতাদের নেতৃত্ব, রাজনৈতিক ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী মনোভাব এবং চাঁদাবাজদের দৌরাত্ব।
অপরদিকে ভৌগলিক অবস্থানও কিছুটা দায়ী। ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলার তিনটি উপজেলার সংযোগ স্থলে এ গারোহাটের অবস্থান। মধুপুর উপজেলার পূর্ব প্রান্ত, ঘাটাইল উপজেলার শেষ উত্তরপূর্ব প্রান্ত, এবং ফুলবাড়িয়া উপজেলার শেষ পশ্চিম প্রান্তের সংযোগস্থলে এ হাটের অবস্থান।
মূল হাটের অবস্থান মধুপুর অংশে হলেও কালের আর্বতে হাটটি ধীরে ধীরে ঘাটাইল অংশে প্রসার ঘটেছে। ঐতিহাসিক গুইলার পাহাড়ের এ ঐতিহ্যবাহী হাটটি সরকারের বিমাতা সুলভ কাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এ হাট সপ্তাহে দুই দিন বসে।
ঘাটাইল উপজেলার অংশে সরকার প্রায় অর্ধকোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছে। অথচ বারবার সরকারের নিকট গ্রোথসেন্টারের জন্য আবেদন করেও বিফল হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। মধুপুর অংশে সম্প্রতি স্থানীয় ইজারাদারের মাধ্যমে এ হাটে পানীয় জলের জন্য একটি টিউবওয়েল ও একটি টয়লেট করেেছ। তাও বর্তমানে ব্যবহার অনুপোযোগী।
মুল হাটটি দখল করে নিয়েছে ভুমিদস্যুরা। এলোমেলো ঘর তুলে আবাসিক এলাকার নামে চলছে নানা অসামাজিক কাজ। ফলশ্রতিতে হয়রানির শিকার হচ্ছে নিরীহ লোক, নষ্ট হতে চলেছে সামাজিক পরিবেশ। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষাদীক্ষায়ও পিছিয়ে নেই এ অঞ্চলের মানুষ।
এ হাটের সখিপুর–কাকরাইদ, পোড়াবাড়ি-গারোহাট, গারোহাট-ফুলবাড়ীয়া, গারোহাট-রক্তিপাড়া, গারোহাট-মধুপুর মহাসড়কের পাশে সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে সোনালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা, গ্রামীণ ব্যংক, ব্রাক,ব্যুরো টাঙ্গাইল, আশা, প্রশিকা, টি.এম,এস.এস,সি.সি.ডি.বি, আনন্দসহ এক ডজনের উপরে এনজি ও এর অফিস ও কার্যক্রম। রয়েছে একটি কলেজ, দুটি উচ্চবিদ্যালয়, দুটি দাখিল মাদ্রসা, দুটি এবতেদায়ী মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি কিন্ডাগার্টেন স্কুল।
জানা যায়, যদিও স্বর্ণ কবিরাজ (গারো) আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত এ হাট। মুলত এ জমির মালিক বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বনবিভাগ। ৩৮৩২ নং দাগের ২ নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সাত একর জমি সরকার গারোহাটের নামে পেরি পেরি ভুক্ত করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জবরদখল মুক্ত করে গ্রোথসেন্টার করার প্রতিশ্রতি দিলেও প্রভাবশালী ভুমি দস্যুদের কাছে নতি স্বীকার করে পিছু হটেছেন।
হাটের মূল অংশ যারা দখল করে আছে তারা অধিকাংশ এ মধুপুর এলাকার ভোটার বা নাগরিক নন। নব্বই এর দশক হতেই গারোহাটে রয়েছে তিনটি ট্রাক শ্রমিক অফিস, একটি শ্রমিক অফিস, একটি সিএনজি অফিসসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের অফিস। যে অফিসগুলো শুধু কমিশন আদায় করে প্রতি বছর প্রায় অর্ধকোটি টাকা। কোন শ্রমিক অফিসের নেতৃত্বে নেই প্রকৃত শ্রমিক যার ফলে এ সুদীর্ঘ সময় ধরে গঠণ হয়নি শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, চলছে শুধূ লুটপাট। বাজারের প্রধান পণ্য সামগ্রী আনারস, কাঠাল, কলা, হলুদ, আদা, কচুসহ নানা প্রকার কৃষিপণ্য ও সবজি।
এছাড়াও কাঠ এবং কাষ্ঠ জাতীয় পণ্য ও গরু ছাগলের প্রধান হাট এটি। প্রতি হাটবার প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা লেনদেন হয় এ হাটে, তবে নেই কোন প্রশাসনিক নিরাপত্তা। বেশ কয়েক বছর পূর্বে পুলিশ ফাড়ি করার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে, ভবন প্রস্তুত করে হঠাৎ অদৃশ্য হাতের ছোয়ায় ভবনের দরজা-জানালা উধাও হয়ে গেছে।
সরকারি রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত বণিক সমিতির চেয়ার, টেবিল, বৈদ্যুতিক পাখাও উধাও হয়ে গেছে। এসব চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যুদের দাপটে জিম্মি হয়ে আছে হাটের ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষ। টু-শব্দ করার জো নেই।
গারোহাটটি এ বছর প্রায় সাত লক্ষ টাকা ইজারা হয়েছে। ইতিপূর্বে হাট ইজারার উন্নয়নের ১৫% টাকা ভোগ করছেন ইজারাদার নিজেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ওরা মসজিদের নাম দিয়ে জমি দখল করে। কয়েক বছর আগে মাদ্রাসার নামের জমি বিক্রি করে দিয়েছে এজন্য আবার তাদেরকেই মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে একজন জবর দখলকার বলেন, জমি দখল করেছি, খরচও করেছি অনেক। নো প্রবলেম, কেউ কিছু বলার সাহস পাবেনা।
গারোহাটের পেরিপেরি ভূক্ত জমির দখলকার রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। হাটের নেই সুশৃঙ্খল হাট পরিচালনা কমিটি। হাটের সূধীজন মনে করেন, সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অপরদিকে স্থানীয় জনগণ পাবে সুষ্ঠ হাট ব্যবস্থাপনা। সব মিলিয়ে হাটটি ভূমিখোর ও চাঁদাবাজদের হাত থেকে মুক্ত হোক এটাই প্রত্যাশা।