ডেস্ক: দেশে মহামারির শুরু থেকেই রাজধানী ঢাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ছিল। সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে আক্রান্তের হার কমতে দেখা যায়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো শিথিল হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীতে আবার সংক্রমণ বাড়ছে। গত এক মাসে রাজধানীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। এই তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)।
আইইডিসিআরের হিসাবে পুরো রাজধানীতেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। প্রায় সব এলাকায় নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, উত্তরায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
রাজধানীর জীবনযাত্রা মহামারি শুরুর প্রায় আগের অবস্থায় চলে এসেছে। রাস্তায় মানুষের ঢল আর যানজট অনেকটা আগের মতো। খুব কম মানুষ মাস্ক পরে রাস্তায় বের হচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিষয়টি গুরুত্ব হারিয়েছে। কাঁচাবাজার শুধু নয়, অফিস ও ব্যাংক পাড়াতেও পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যাচ্ছে না। মানুষ অনেকটা বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে চলাফেরা–যাতায়াত করছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো সরকারি উদ্যোগ মানুষ দেখতে পাচ্ছে না, মানুষের সামনে কোনো বিধিনিষেধ কার্যত নেই। তাই বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে সংক্রমণ থেমে নেই।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের কথা নিশ্চিত করে সরকার। ক্রমে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। গত ৫ এপ্রিল পাঁচটি জায়গাকে সংক্রমণের ক্লাস্টার (কাছাকাছি একই জায়গায় অনেক আক্রান্ত) হিসেবে চিহ্নিত করেছিল আইইডিসিআর। এর দুটি টোলারবাগ ও বাসাবো ছিল রাজধানীতে। বাকি তিনটি ছিল নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুরের শিবচর এবং গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর।
ক্লাস্টার থেকে সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে অনেক আগেই। এখন দেশে নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩ জন। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ৩ হাজার ৯৮৩ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৫ জন।
দেশে নিশ্চিত আক্রান্ত বা ইতিমধ্যে যাঁদের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে, তাঁদের এলাকাভিত্তিক হিসাব প্রকাশ করে আইইডিসিআর। যদিও সব এলাকাভিত্তিক হিসাব নেই। গতকাল সোমবার পর্যন্ত আক্রান্ত প্রায় ৩ লাখ মানুষের মধ্যে ২ লাখ ১৮ হাজার ১২২ জনের এলাকাভিত্তিক তথ্য দিয়েছে আইইডিসিআর। তাঁদের মধ্যে ৭৫ হাজার ৫৮৬ জন রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা।
গত ২২ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৩২২ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এখানে ২৭ হাজার ২৬৪ জন রোগী বেড়েছে। শতকরা হিসাবে আগের সাড়ে চার মাসের তুলনায় এই এক মাসে রাজধানীতে রোগী বেড়েছে ৫৬ শতাংশ।
মাঝখানে ঢাকার বাইরের তুলনায় রাজধানীতে সংক্রমণ কিছুটা কমতির দিকে ছিল। ২৭ মে পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের ৫৪ শতাংশ ছিল রাজধানীর বাসিন্দা।
২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে সেটি কমে ৩১ শতাংশে নেমেছিল। এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যায় রাজধানীর অংশ আবার বাড়ছে। এখন দেশে মোট আক্রান্তের ৩৫ শতাংশ রাজধানীর বাসিন্দা।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নমুনা পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে আক্রান্তের যে সংখ্যা দেয়, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিসিডিআরবি) যৌথ জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে ১০ আগস্ট বলা হয়, রাজধানীর আনুমানিক ৯ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০১৭ সালে ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। সে হিসাবে রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ২০ হাজার।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy