করোনা প্রতিরোধক সামগ্রীর মধ্যে মাস্ক অন্যতম। করোনা শুরুর দিকে মাস্কের চাহিদা ছিলো তুঙ্গে। সেইসঙ্গে নানা মহলে মাস্ক নিয়ে অনিয়মের ব্যাপক সমালোচনাও ওঠে। এরপর নানা ব্র্যান্ডের মাস্ক বাজারে এলেও দাম ছিলো আকাশছোঁয়া।
লকডাউনের পর সীমিত পরিসরে সবকিছু চালু হলে মাস্কের বিপুল চাহিদা দেখা দেয়। আর এতে অলিগলি থেকে শুরু করে ফুটপাত, বাজার, ফার্মেসি, মুদি দোকান ও অনলাইনে সয়লাব নানা ধরনের মাস্কে। যেকোনো দামে দেদারসে বিক্রি হয়েছে সার্জিক্যাল, এন-৯৫, কেএন-৯৫ মাস্ক।
ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠে মাস্ক বিক্রির দোকান ও তৈরির কারখানা। তারপরও মাস্ক-হেক্সিসলের দামের কমতি ছিলো না। সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ছিলো ৩০ থেকে ৪০ টাকা যা ইতিহাসের পাতায় বড় অক্ষরেও লেখা থাকবে। সেই মাস্ক এখন হাঁকডাক করে ৩ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন না খুচরা বিক্রেতারা। আর হেক্সিসলের দামের বিষয়ও এখন সবার জানা।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও রোগীদের মৃত্যু অব্যাহত থাকলেও স্বাস্থ্যবিধির অন্যতম অনুষঙ্গ মাস্ক ব্যবহারের আগ্রহ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। বর্তমানে যা কিছু চাহিদা তা সার্জিক্যাল মাস্কের। ১০ টাকায় তিনটি মাস্কও কিনতেও অনীহা মানুষের।
মাস্কের চাহিদা যখন তুঙ্গে তখন হাসপাতালে ব্যবহৃত পুরনো মাস্ক ধুয়ে তা পুনরায় বিক্রির নজিরও আছে। এমন এক চক্রকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
দোকানিরা এখন আর বাড়তি মাস্ক মজুদ রাখেন না। আগে যেসব মাস্ক মজুদ আছে সেগুলো বিক্রিয়ের জন্য প্রাণপণ চেষ্ট করে যাচ্ছেন।
সদরঘাট, গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, লালবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশেই বসেছে মাস্কের দোকান। অস্থায়ী এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে সব ধরনের মাস্ক। সার্জিক্যাল মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকায়। অথচ করোনা কালের শুরু দিকে দেশে মাস্ক নিয়ে যখন হৈ-হুল্লোড় ছিলো, তখন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ১১ মার্চ সার্জিক্যাল মাস্কের দাম নির্ধারণ করেছিলো। তিন স্থরের একেকটি সার্জিক্যাল মাস্কের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। তা সময়ের ব্যবধানে কমে হয়েছে মাত্র তিন টাকা।
একইভাবে কমেছে ফিল্টারযুক্ত কাপড়ের মাস্কের দাম। বর্তমানে ১০ টাকায় মিলছে এসব মাস্ক। চাহিদা না থাকায় কমে এসেছে কেএন-৯৫ মাস্কের দাম। খুচরা বাজারে ৪০-৫০ টাকা এবং পাইকারি বাজারে ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব মাস্ক।
বাসের মধ্যে মাস্ক বিক্রি করছেন এক হকার- ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
অস্থায়ী দোকানের মতো রাজধানীতে মাস্ক বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ হকাররাও। একই মাস্ক বিক্রি হচ্ছে মুদির দোকানে। ফার্মেসিগুলোতে উন্নত ও নিম্নমানের সব মাস্কই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মাস্ক কেনার মতো ক্রেতা নেই। মাস্কের পর্যাপ্ত যোগান এবং দাম কম হলেও বিক্রির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে বলে জানিয়েছে নগরীর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর চকবাজার, ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড ও আনন্দ সিনেমা হল এলাকায় মাস্ক বিক্রির অর্ধশতাধিক অস্থায়ী দোকান রয়েছে। এসব দোকানে প্রতিটি সার্জিক্যাল মাস্ক ৩ টাকা আর এক বক্স মাস্কের দাম ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বক্সে রয়েছে ৫০টি মাস্ক।
ফার্মগেট এলাকার মাস্ক বিক্রেতা মনির বলেন, যখন বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করতাম, তখন ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা ইনকাম হতো। এখন বিক্রি নাই বললেই চলে। সার্জিক্যাল মাস্ক কিছু চলে, তাও আগের চাইতে কম দামে ১০ টাকায় তিনিটি বিক্রি করি।
পল্টন মোড়ে মাস্ক বিক্রেতা নাছির উদ্দীন বলেন, বেচাবিক্রি নাই। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ মাস্কের দিকে তাকায়ও না। আগে একটি মাস্ক বিক্রি করতাম ২০- ৩০ টাকায়; এখন ৩ টাকা করে বিক্রি করি তাও বিক্রি হয় না।
রাজধানীর সদরঘাটের লাল কুঠির নৌকাঘাটে মাস্ক বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা- ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
রাজধানীর সদরঘাটের লাল কুঠির নৌকাঘাটে মাস্ক বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা- ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
সদরঘাটে মাস্ক বিক্রেতা কামালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন হাঁকডাক করে ক্রেতাদের দৃষ্ট আকর্ষণের চেষ্টা করেও মাস্ক বিক্রি করতে পারছি না। কিছু মাস্ক বিক্রি করতে পারলেও করোনা প্রতিরোধক হেক্সিসল বিক্রি হয় না।
মাস্ক উৎপাদকারী জনি মিয়া বলেন, মাত্র একমাসের ব্যবধানে মাস্কের চাহিদা ৫০ শতাংশের বেশি নিচে নেমে গেছে। বাধ্য হয়ে দাম কমিয়েছেন উৎপাদকরা। পাইকার, মজুদদার এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা মুনাফা কম নিয়েও বিক্রি করতে পারছেন না।
মাস্ক ব্যবহারে মানুষকে আরো কঠোর সতর্ক হতে হবে এবং বাজারজাত করা মাস্কগুলোর মানের দিকে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।