তানভীর আহাম্মেদ বিশেষ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের অবহেলায় পশুর অপচিকিৎসায় একের পর এক পশু মারা গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন খামারিরা।
গত কয়েকদিনে সোনারগাঁ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের কয়েকজন উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার টাকা চুক্তির বিনিময়ে অপ চিকিৎসার কারনে গরু ও ছাগল মারা গিয়ে খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. ইউসুফ হাবীরের দাবী ভ্যাটেনারী সার্জন না থাকায় একে পর এক অপ চিকিৎসা হচ্ছে। ভ্যাটেনারী সার্জনের পদ থাকলেও তিনি অন্যত্র বদলি হওয়ার কারনে এ পদে এখনও কেউ যোগদান করেনি।
জানা যায়, গতকাল বুধবার সোনারগাঁ পৌরসভার গোয়ালদী এলাকায় মোকাররম হোসেন নামের এক খামারীর প্রায় দুই লাখ টাকার মূল্যের এক গর্ভবতী গাভী সোনারগাঁ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসানের অপ চিকিৎসায় মারা যায়। তার খামারে আরো ২০টি ছোট বড় গরু রয়েছে।
গোয়ালদী এলাকায় মোকাররম হোসেন নামের এক খামারী জানান, তিনি কৃষি ব্যাংক থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি এ খামার গড়ে তোলেন। এ খামারের সবচেয়ে দামী গরুটি অপচিকিৎসার কারনে মারা যায়।
তিনি আরো জানান, গরুটি অসুস্থ হলে প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে ফোন করে পরামর্শ চাইলে উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান ১৫ হাজার টাকা বিনিময়ে গরুটি সুস্থ করে দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে গিয়ে গরুকে ইনজেকশন পুশ করলে ৩ ঘন্টা পর গরুটি মারা যায়।
অপর দিকে গত মঙ্গলবার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের উলুকান্দি গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী আরেক খামারি জাহানার রেগম জানান, গরু থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮ কেজি দুধ দোহন করতেন। এ গরু সকাল বিকেল দুধ দোহন করার ফলে গরুর শরীর থেকে ক্যালসিয়াম কমে যাওয়ার অজুহাতে কামরুল হাসান বাড়িতে গিয়ে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে দুটি ইনজেকশন পুশ করে। ইনজেকশন পুশ করার ২ ঘন্টার মাথায় গরুর শুয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ৫ শ টাকা নিয়ে তিনি আরেক উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা তাবারক হোসেন ভূইয়াকে এ গরুর দায়িত্ব দিয়ে সটকে পড়েন। তাবারক হোসেন দায়িত্ব নিয়ে পুনরায় ওই টাকায় চুক্তি করে আরো ২টি ইনজেকশন পুশ করেন। পরে গরুটি মারা যায়। গরুটি মারা যাওয়ায় ওই খামারির পরিবার নি:স্ব হয়ে পড়েছেন।
এদিকে হামছাদী এলাকায় গত জুলাই মাসে মফিজউদ্দিনের গরু, সোনারগাঁ পৌরসভার সাহাপুর এলাকায় উন্নত জানের ৪টি ছাগল, গোবিন্দপুর এলাকায় কাউসার মিয়ার একটি গরু অপচিকিৎসার কারনে মারা যায়।
অভিযুক্ত সোনারগাঁ উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, চুক্তির বিনিময়ে তিনি চিকিৎসা করে থাকেন। তবে চিকিৎসা দেওয়া তার দায়িত্ব। গরু মরে গেলে তার কি করার আছে বলে জানান। বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে।
সোনারগাঁও উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. ইউসুফ হাবীব বলেন, চুক্তির বিনিময়ে চিকিৎসা করার কোন নিয়ম নেই। ভ্যাটেনারী সার্জনের পদ থাকলেও এ পদে এখনও কেউ যোগদান করেনি। ফলে উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের দিয়ে এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ভ্যাটেনারী সার্জন প্রতিটি ইউনিয়নে দরকার। শুধুমাত্র উপজেলা একটি পদ রয়েছে। তারপরও এ পদ এখন শূন্য।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..