সিলেট প্রতিনিধি : করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে সিলেটে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। গত রোববার রাতে নগরীর সাতটি হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে ব্যর্থ হন এক রোগী। সোমবার ভোরে মারা যান স্ট্রোকের শিকার ওই নারী। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ওই নারীর বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট রোড এলাকার। তার আইসিইউ সেবা প্রয়োজন ছিল।
এর আগে গত ৩১ মে দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভোগা নগরীর কাজীটুলা এলাকার বাসিন্দা এক নারী অসুস্থ হলে সিলেটের ছয়টি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সোমবার ভোরে মারা যাওয়া নারীর এক আত্মীয় দাবি করেন, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট রোড এলাকার বাসিন্দা ওই নারী দীর্ঘদিন ধরে প্রেসার ও ডায়বেটিসজনিত রোগে ভুগছিলেন। রোববার সন্ধ্যায় তিনি বাথরুমের ভেতর স্ট্রোক করেন। স্থানীয় চিকিৎসক তাকে দেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। মৌলভীবাজারের কোনো হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় তারা রোগীকে সিলেটে নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রহণ করেনি।
রোগীর অবস্থা ক্রমশ অবনতি হওয়ায় তারা একে একে সিলেট নগরীর আল হারামাইন হসপিটাল, ইবনে সিনা হাসাপাতাল, মাউন্ট এডোরা, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হসপিটাল এবং নুরজাহান হসপিটালে নিয়ে যান। কিন্তু কোনটিতেই কোনো চিকিৎসক রোগীর কাছে আসেননি।
সাতটি হাসপাতাল ঘুরে সঙ্কটাপন্ন রোগীকে নিয়ে ওসমানী হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হয় অ্যাম্বুলেন্স। সোমবার ভোররাতে ওসমানী হাসপাতালের গেটে পৌঁছামাত্র ওই নারী মারা যান। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিন্তা করছে মৃতের পরিবারের সদস্যরা। দুটি ঘটনাতেই আইসিইউ খালি না থাকা, রাত্রিকালীন চিকিৎসকের অনুপস্থিতিসহ নানা অজুহাত দেখায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো।
এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘ঘটনাগুলোর সত্যতা এখনো প্রমাণিত নয়। তবে সেটি সত্য হলে অত্যন্ত অমানবিক হয়েছে। আমরা প্রথম ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালগুলোকে সর্তকর্তামূলক চিঠি দিয়েছি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগের অপেক্ষা করছি আমরা। তবে জনগণকে আহ্বান জানাব, মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে প্রথমে সরকারি হাসপাতালে আসার জন্য। ওসমানী হাসাপাতালে কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে-এমন তো অভিযোগ নেই।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে সিলেটের কাজীটুলা এলাকার বাসিন্দা এক নারী কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে এ ধরনের অভিযোগ আসে। লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’