স্পোর্টস প্রতিবেদক: ৩০৩ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নেমে ৭৩ রানেই অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে। এমন অবস্থায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ জয়ের পক্ষে ভুলেও কেউ বাজি ধরবে না। কিন্তু বাজি ধরেন অস্ট্রেলিয়ার ছয় ও সাত নম্বর ব্যাটসম্যান যথাক্রমে অ্যালেক্স ক্যারি ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ষষ্ঠ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে রেকর্ড ২১২ রানের জুটি গড়ে বাজিমাত করেন দুই সেঞ্চুরিয়ান ক্যারি-ম্যাক্সওয়েল। এই জুটির আিবশ্বাস্য ব্যাটিং নৈপুন্যে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেটে অবিশ্বাস্য জয়ের স্বাদ নেয় অসিরা। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ফলে দেশের মাটিতে ২০১৫ সাল থেকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে না হারার কীর্তিতে ছেদ পড়লো ইংল্যান্ডের। ক্যারি ১০৬ ও ম্যাক্সওয়েল ১০৮ রান করেন। তবে দলীয় ২৯৩ রানে তাদের বিদায়ের পর ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। সেই কাজটি সাড়েন দুই পেসার মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। শেষ ওভারে প্রয়োজনীয় ১০ রান নিতে গিয়ে একটি ছক্কা-চার মারেন স্টার্ক। সে দিক বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়ার জয়ে স্টার্কের অবদানটাও কম নয়।
প্রথম দুই ম্যাচ শেষে সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করায় তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি রুপ নিয়ে অঘোষিত ফাইনালে। এমন ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে নেমেই ইনিংসের প্রথম দু’বলেই বড় ধরনের ধাক্কা সইতে হয় স্বাগতিকদের। স্টার্কের প্রথম ও দ্বিতীয় ডেলিভারিতে খালি হাতে ফিরেন জেসন রয় ও জো রুট। এমন ধাক্কা শক্ত হাতে সামাল দেন আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও অধিনায়ক ইয়োইন মরগান। মারমুখী মেজাজে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। তাতে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। ১০ দশমিক ১ ওভারে ইংল্যান্ডের স্কোর ৬৭ রান’এ নিয়ে যান বেয়ারস্টো-মরগান। ৪টি চারে ২৩ রান করা মরগানকে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন সিরিজের সেরা বোলার অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এডাম জাম্পা। মরগানের পর উইকেটরক্ষক জশ বাটলারকেও বিদায় দেন জাম্পা। তাই ৯৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। এ অবস্থায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করা স্যাম বিলিংসকে নিয়ে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন বেয়ারস্টো। উইকেট বাঁচিয়ে খেলায় মনোযোগী হন তারা। তাতে সফল হন। ষষ্ঠ উইকেটে ১১৪ রানের জুটি গড়েন বেয়ারস্টো-বিলিংস। উইকেটে জমে যাওয়া বেয়ারস্টো-বিলিংসের মাঝেও বাঁধা হয়ে দাড়ান জাম্পা। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৭ রানে থামেন বিলিংস। ৫৮ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি। বিলিংসের আউটের আগের ওভারেই কামিন্সকে ছক্কা মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন বেয়ারস্টো। আর ৪১তম ওভারের প্রথম বলে বেয়ারস্টোকে বিদায় করেন সেই কামিন্সই। ১২৬ বলে ১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১২ রান করেন বেয়ারস্টো। সেট ব্যাটসম্যান বেয়ারস্টো ফিরে যাওয়ায়, ইংল্যান্ডের রান তোলায় ভাঁটা পড়ার কথাই ছিলো। কিন্তু সেটি হতে দেননি ক্রিস ওকস। সাত নম্বরে নামা ওকস ৩৯ বলে ৬টি চারে অপরাজিত ৫৩ রান করেন। সাথে টম কারান ১৯ ও আদিল রশিদ অপরাজিত ১১ রান করেন। ফলে ৭ উইকেটে ৩০২ রানের বড় সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ক ও জাম্পা ৩টি করে উইকেট নেন। ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী জাম্পা। জয়ের জন্য ৩০৩ রানের লক্ষে খেলতে নেমে এবারও ব্যর্থ অস্ট্রেলিয়ার টপ-অর্ডার। ডেভিড ওয়ার্নার ২৪, অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ১২, মার্কাস স্টয়নিস ৪, মার্নাস লাবুশেন ২০ ও মিচেল মার্শ ২ রান করে ফিরেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ, এ ম্যাচেও খেলতে পারেননি। ১৬ দশমিক ৫ ওভারে টপ-অর্ডারের দ্রুত বিদায়ে দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেন ক্যারি ও ম্যাক্সওয়েল। নিজের ইনিংসের শুরুতেই ইংল্যান্ড পেসার জোফরা আর্চারকে ছক্কা মারেন মারমুখি মেজাজে থাকা ম্যাক্সওয়েল। উইকেটে সেট হয়ে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন ক্যারি ও ম্যাক্সওয়েল। দু’জনের হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৪ রান পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। আর ৪৫ ওভারে শেষে দু’জনই নব্বইয়ের ঘরে পা রাখেন। সেসময় অস্ট্রেলিয়ার রান ছিলো ৫ উইকেটে ২৬০ রান। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৪৩ রানের প্রয়োজন ছিলো। ক্যারি ও ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং দৃঢ়তায় নিশ্চিত জয়ই দেখছিলো অস্ট্রেলিয়া। ৪৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কারানকে ছক্কা মেরে ১১৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ম্যাক্সওয়েল। ২০১৫ সালে সিডনিতে বিশ্বকাপের ৩২তম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১০২ রানের পর দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে রশিদকে ছক্কা মেরে ৯৯ রানে পৌঁছান ক্যারি। আর পরের বলে ১ রান নিয়ে ৩৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। তবে ৪৮তম ওভারের তৃতীয় বলে ম্যাক্সওয়েলকে রশিদ ও ৪৯তম ওভারের শেষ বলে ক্যারিকে আউট করে ম্যাচে টান-টান উত্তেজনা তৈরি করেন আর্চার। তাই শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১০ রানের প্রয়োজন পড়ে অস্ট্রেলিয়ার। ঐ ওভারে রশিদের প্রথম বলে ছক্কা ও চতুর্থ বলে চার মেরে অস্ট্রেলিয়াকে অবিশ্বাস্য জয়ের স্বাদ দেন স্টার্ক। বিফল হতে দেননি ক্যারি ও ম্যাক্সওয়েলের জোড়া সেঞ্চুরি। ১০৬ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ক্যারি ১০৬ ও ম্যাক্সওয়েল ৯০ বলে ৪টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১০৮ রান করেন। ইংল্যান্ডের ওকস-রুট ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাক্সওয়েল। ৩ ইনিংসে ১টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরিতে সিরিজে ১৮৬ রান করেন তিনি।
ওয়ানডেতে হারলেও টি-২০ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস-ইংল্যান্ড) :
ইংল্যান্ড : ৩০২/৭, ৫০ ওভারে (বেয়ারস্টো ১১২, বিলিংস ৫৭, ওকস ৫৩, জাম্পা ৩/৫১)।
অস্ট্রেলিয়া : ৩০৫/৭, ৪৯.৪ ওভার (ম্যাক্সওয়েল ১০৮, ক্যারি ১০৬, রুট ২/৪৬)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ সেরা : গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলো অস্ট্রেলিয়া।