নোয়াখালীর সুবর্ণচরের খাসেরহাট বাজারের ছোট্র একটি টিনসেট ঘরের সামনে দৃষ্টি নন্দন সাইন বোর্ডে লিখা আছে, সুবর্ণ পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার, “বিশুদ্ধ পানি খান, জীবন বাঁচান…”। কিন্তু ওই পানি উৎপাদনের কারখানার ভিতরের চিত্র ভিন্ন। কারখানার ভিতরে ডুকতেই চোখে পড়ে সামেনর প্রথম কক্ষে এস.ডি ওয়াটারের ভলভো ‘ব্যাটারী পানি’ ও উৎপাদন সামগ্রী। পাশের রুমেই রয়েছে গোল্ডেন লাইফ ‘কলম’ তৈরীর মেশিন ও উৎপাদন সামগ্রী। এর পিছনের অংশে রয়েছে সুবর্ণ পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার বোতলজাতকরণের মেশিন ও উৎপাদন সামগ্রী। অর্থাৎ জনবহুল এলাকায় একটি টিনসেট ঘরে একের ভিতর তিন। এস.ডি ওয়াটারের ভলভো ‘ব্যাটারী পানি’ উৎপাদনের ঠিকানা জেলা সদরের সোনাপুর বিসিক এলাকায় হলেও কোম্পানীর নাম নকল করে সুবর্ণচরের খাসেরহাটে অবৈধভাবে উৎপাদন করছেন নুরুল ইসলাম।
বিশুদ্ধ বোতলজাতকরণের রুমে ফ্লোরে হাবুডুবু খাচ্ছে নোংরা পানি। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবজনা। পানি পরিক্ষা ও বিশুদ্ধ করণের নেই কোন কেমিস্ট। পাওয়া যায়নি পানি বিশুদ্ধ করণের মেডিসিন। তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও কারখানার মালিক নুরুল ইসলামের ছেলে তাজুল ইসলাম নিজেই কেমিস্ট, নিজেই উৎপাদক। তাদের স্লোগানের সাথে পানি উৎপাদনের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। জীবন বাঁচানোর জন্য বিশুদ্ধ পানি মনে করে টাকা দিয়ে কিনে খেতে হচ্ছে নোংরা পানি। যে পানি খেয়ে চরের হাজার হাজার মানুষ জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ওই কারখানার পানি খেয়ে চরের বহু মানুষ আর্সিনিক ও পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই সুবর্ণ পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানায় বিএসটিআই চট্রগ্রাম বিভাগীয় অফিসের সমন্বয়ে সুবর্ণচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মো. আরিফুর রহমান অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে বেরিয়ে পানি বোতলজাতকরণের এমন নোংরা চিত্র। পরিবেশ এবং প্যাকেজিংয়ে অনিয়মের কারণে ওই প্রতিষ্ঠানকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করলেও একই কারখানায় এস.ডি ওয়াটারের ভলভো ‘ব্যাটারী পানি’ উৎপাদন এবং কলম উৎপাদন বিএসটিআই এর আওয়াতায় না থাকায় কোন বড় ধরনের জরিমানা করেনি ভ্রাম্যমান আদালত। শুধু ব্যাটারী পানি আর কলম নয়, নুরুল ইসলাম পাশের একটি জনবহুল ভবনে অবৈধভাবে তৈরী করছেন প্লাষ্টিক। ওই কারখানার কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন খাসেরহাট বাজারের মানুষ।
একই দিন দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মো. আরিফুর রহমান ভ্রাম্যামান আদালত পরিচালনা করেন উপজেলার চরজব্বার-চেয়ারম্যান ঘাট সড়কের পাশে অবস্থিত নুরানী ফিলিং ষ্টেশনে। সেখানে ডিজেল ও পেট্রল ওজনে কম দেওয়ার অপরাধে ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইনে ওই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এসময় বিএসটিআই চট্রগ্রাম বিভাগীয় অফিসের পরিদর্শক (মেট) মো. মুকুল মৃধা, চরজব্বার থানার পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।