গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দীর্ঘ ১৮ মাসের পায়নি নিজ নামীয় ভিজিডি কার্ডের চাল। এক দরিদ্র নারীর নামে বরাদ্দকৃত ভিজিডির চাল তুলে আত্মসাৎ করে চলেছেন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফুলমালা হালদারের বিরুদ্ধে। এব্যাপারে ওই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি রত্নেস্বর রায় জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে জানাগেছে, কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামের রবীন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী ময়না রায়ের নামে ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল বরাদ্দ হয়। বিষয়টি ময়না রায় জানেনই না। দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে ময়নার নামে বরাদ্দকৃত ওই চাল সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফুলমালা হালদার কৌশলে নিজে উঠিয়ে তা আত্মসাৎ করছেন। শুধু ময়না নয় সংরক্ষিত ওই ওয়ার্ডের আরো ৫-৬ জনের নামে বরাদ্দকৃত চাল এভাবেই ইউপি সদস্য ফুলমালা আত্মসাৎ করে চলেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ময়না রায় বলেন, ইউপি সদস্য ফুলমালা দীর্ঘদিন আগে আমার নিকট থেকে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড নেয়। কিন্তু কোন কারণ বলেনি। আমার স্বামী কয়েক বছর ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন। কোন কাজ করতে পারে না। এক মেয়ে ও দুই ছেলে থাকলেও তারা কেউই উপার্জনক্ষম নয়। অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে আমাকেই সংসার চালাতে হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। এসময় সরকারি সাহায্য চাইলে এলাকার কয়েকজন আমাকে বলে তোমার নামে ভিজিডির চাউল বরাদ্দ আছে তোমার অন্য সাহায্যের দরকার কি। তখন খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ১৮ মাস ধরে মহিলা মেম্বার ফুলমালা হালদার আমার নামের চাল তুলে নিচ্ছেন। আমার নামে যে কার্ড আছে এতোদিন জানতামই না। রামশীল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রমনী রায় বলেন, ময়নার নামে ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ভিজিডি কার্ড ইস্যু হয়। চাল কিভাবে ইউপি সদস্য ফুলমালা নিয়ে যান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মেম্বারই ময়নার চাল উত্তোলন করে নিয়ে যান। রামশীল ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন খবর আমার কাছে আসেনি। আপানার কাছেই শুনলাম, বিষয়টি আমি দেখব। অভিযুক্ত নারী ইউপি সদস্য ফুলমালা হালদারচাল উত্তোলনের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, রাজাপুর গ্রামে একটি কালী মন্দির আছে। মন্দিরে আমি ও ময়নার ছেলে পুজোঁ দেই। এই মন্দিরে প্রতি মাসে একটি অনুষ্ঠান হয়। ময়নার ওই চাউল উঠিয়ে বিক্রি করে যে টাকা হয় তা মন্দিরের অনুষ্ঠানে খরচ করি। চাল আমি নিজেই তুলি। ময়নার ছবি থাকা স্বত্বেও তার স্বাক্ষর ছাড়া চাল কিভাবে ইউপি সদস্য ফুলমালা তোলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার কোটালীপাড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভ বলেন, এতোগুলো কার্ডতো চেক করা সম্ভব নয়। যেহেতু অভিযোগ এসেছে, তদন্তের ভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকেই দেবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক যা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির যে কার্ডগুলোতে ঝামেলা আছে,যথাযথ খোঁজ খবর নিয়ে রি-স্যাটেল করা হবে। আর রামশীল ইউপি সদস্য ফুলমালার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।