যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ডাবললাইন রেল সেতু’নির্মাণ কাজ আগামী ২৯ নভেম্বর উর্দ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এটাই সবচেয়ে বড় রেল সেতু। দেশের ৩টি বড় নদীর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম নদী যমুনার উপর এটি নির্মিত হবে। এই প্রকল্প বর্তমান সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আর একটি নতুন মাইলফলক বলে মনে করেন মন্ত্রী। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দেবে জাইকা (জাপান)
। এই অর্থের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিবেন ৪ হাজার ৬৩১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বাঁকি ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা সহায়তা করবে জাইকা। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
যমুনা নদীর উপর আরেকটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ডাবল রেল সেতু নির্মাণে দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলকে যোগাযোগে সময় নিয়ন্ত্রনে সহায়ক হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। ভারত, মিয়ানার, ভূটান ও নেপালসহ উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৩.৭০ কিলো-নিউটন/মিটার লোড বহনের অনুমতি রয়েছে এবং ট্রেন ঘন্টায় ২০কিঃমিঃ
নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলাচল করছে। এই সেতুতে ব্রডগেজ কন্টেইনারবাহী ফ্ল্যাট ওয়াগন, ওভারসাইজড্ কনসাইনমেন্ট, অপেক্ষাকৃত ভারী ওয়াগন ইত্যাদি মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারেনা। এবং লোকোমোটিভের সংখ্যা একটির মধ্যে সীমিত রাখতে হয়। যার কারণে রেলওয়ে অপারেশনে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ নেললাইনের পূর্ণ সুবিধা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেতুতে ট্রেন চলাচলে গতি নিয়ন্ত্রাদেশ ও সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় একাধিক রেল পরিচালনা করাও সম্ভব হয় না। তাই অভ্যান্তরীণ,ক্রস-বর্ডার এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ট্রাফিক এর বর্ধিত চাহিদা বিবেচনা রেখে নির্বিঘ্নে নিরবিচ্ছিন্ন ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রেলওেয়ের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর উজানে পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করা একান্ত জরুরি। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-ট্রেনের গতি বৃদ্ধি ও সেকশনাল গতিতে ট্রেন চলাচল করার সক্ষমতা অর্জন করবে। নতুন রেল সেতুতে চলাচলকারী ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ ট্রেনসমুহ চলাচলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘন্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিঃ মিঃ। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সেতুর উপর দিয়ে দিনে ৮৮ টি ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এতে যাত্রী সাধারণকে স্টেশনগুলোতে আর অপেক্ষা করতে হবে না। তাতে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ২০ মিনিট সময়ও সাশ্রয় হবে। স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক ট্রেন পরিচালনার মাধ্যমে সড়কপথে যানজট কমানো ও বায়ু দূষণের মাত্রা হ্রাস হবে।
এছাড়া সেতুটি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ লিংক। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুতে চার লেনের মহাসড়কসহ সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে ট্র্যাফিকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যমান সেতুটির ধারণক্ষমতা পরিপূর্ণতা পাবে। এ কারণে সরকার কর্তৃক বর্ধিত জাতীয় ও আঞ্চলিক ট্র্যাফিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সেতুটির সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন বিশিষ্ট একটি ডেডিকেটেড রেল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ‘একনেক’ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল আহসান জানান, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০১৬ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ রয়েছে। প্রকল্পটি পৃথক দুটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হবে। এরমধ্যে একটি ডব্লিউডি-১ পাকেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পূর্বাঞ্চলের সিভিল ওয়ার্ক এবং প্যাকেজ ডব্লিউডি-২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ পশ্চিমাঞ্চলের সিভিল ওয়ার্ক।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে দেশের একটি ইংরেজি এবং একটি বাংলা দৈনিকে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। মোট ২৩টি দরপত্র বিক্রি হয়। দরপত্র গ্রহণের সময়টি ছিল ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। ওইদিনই দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল বিড এবং পরে ১৯ জুন ফিন্যান্সিয়াল বিড যাচাই করা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে দুটি প্যাকেজের প্রতিটিতে তিনটি করে দরপত্র বাছাই করা হয়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক টেকনিক্যাল বিড মূল্যায়নে ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ পাকেজে অংশগ্রহণকারী তিনটি জয়েন্টভেঞ্চার কোম্পানির (ওটিজে জয়েন্টভেঞ্চার, টেকেন-ওয়াইবিসি জয়েন্টভেঞ্চার এবং আইএলআই-এসএমসিসি জয়েন্টভেঞ্চর) টেকনিক্যাল বিড কারিগরিভাবে রেসপন্সিভ হয়। জাইকার অর্থায়ন সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে বিধায় টিইসি কর্তৃক সম্পাদিত কারিগরি মূল্যায়নের উপর জাইকার ‘নো অবজেকশন’ গ্রহণ করে রেসপন্সিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রাইস বিড তাদের মনোনীত প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ২০১৯ সালের ১৯ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত টিইসি বৈঠকে খোলা হয় এবং প্রাইস বিড ওপেনিং শীট প্রস্তুত করা হয়।
এতে জাপান ভিত্তিক দুই প্রতিষ্ঠান ডব্লিউডি-১ ওটিজে জয়েন্টভেঞ্চার এবং ডব্লিউডি-২ প্যাকেজে আইএইচআই এসএমসিসি জয়েন্টভেঞ্চার সর্ব নিম্ন দরদাতা হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের পিডি বলেন, যমুনা নদীর উপর নির্মিত বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৩০০ মিটার উজানে ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসম্পন্ন (প্রায় ৪.৮০ কিঃমিঃ) একটি রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে পশ্চিমাঞ্চালে পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে জনগণকে জ্বালানি গ্যাস সঞ্চালনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাতে মানুষের গ্যাস সংকট সমাধান হবে। রেলপথ মন্ত্রী মো.নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, যমুনা নদীর উপর নতুন করে সেতু নির্মাণ করা হলে পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে দূরত্ব কমে আসবে। সাশ্রয় হবে সময়। তাছাড়াও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রেল যোগাযোগ একটি বড় মাধ্যম।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..