ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সাদেকা হালিম বলেন, ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিট এভাবে হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। এর সংস্কার প্রয়োজন হলে হয়তো সেদিকে যাব। আমাদের ৩০০ শিক্ষক এবং সাত-আট হাজার শিক্ষার্থী আছে, তিন দশকের বেশি সময় ধরে আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি করি। আমাদের পদ্ধতি পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ বা ঘ ইউনিটের পরীক্ষা নেওয়া লুপ্ত হতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের ডিনস কমিটি আছে যার আইনি কোনো ভিত্তি নেই। এটা একটা প্ল্যাটফরম যেখানে সব ডিন মাসে একবার ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। গত আট অক্টোবর মিটিংয়ের এজেন্ডা ছিল যে ২০২০-২০২১ সালের যে পরীক্ষা হবে তা কেমন করে নেব এবং আর সাত কলেজ যেহেতু ঢাবির সঙ্গে চলে এসেছে সেটাও আলোচনার বিষয় ছিল। এই দুটো এজেন্ডা ছিল। মিটিংয়ের শেষে উপাচার্য প্রস্তাব করলেন যে ঢাবির ‘ঘ’ ও ‘চ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দরকার নেই। ২০১৭ সালে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি প্রায়ই ডিনস কমিটির মিটিংয়ে এই কথাটা তুলেছেন। ২০১৮ সালে তিন থেকে চারবার কথাটি তুলেছেন যে ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার দরকার নেই। এটা বন্ধ করে দিতে হবে। আমি প্রতিটি মিটিংয়ে এই প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলেছি।
সাদেকা হালিম বলেন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক গ্লোবাল ইকোনমিক অর্ডারের মধ্যে বাংলাদেশের যে অবস্থান তার সবকিছুই সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিষয়। তাহলে এরকম ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের জায়গায় এই অনুষদের শিক্ষকরা জাতীয়ভাবে পলিসি মেকিংয়ের কাজ করে এবং বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলে। আমি বিষয়টি ফ্যাকাল্টিতে উপস্থাপন করেছি। সেই ফ্যাকাল্টি অনুষদ সভায় সবাই সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন যে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেটা ‘ঘ’ ইউনিট থাকবে না ‘ক’ থাকবে তা ইস্যু না। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি বিভাগ এবং সেই বিভাগগুলোতে প্রচুর শিক্ষার্থী। আমরা সেখান থেকে সরব না। আমরা আমাদের মতো করে পরীক্ষা নেব। আর স্বতন্ত্র হওয়ার দরকার হলে তা হয়ে যাব। এই হচ্ছে আমাদের অবস্থান। ঢাবিতে আগে দুবার পরীক্ষা নেওয়া হতো। তিনি বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ গত বছর থেকে প্রশ্নপত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসছে। আর আমাদের এই মডেলও প্রশংসিত হয়েছে। তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে যাব! আমরা বাংলাদেশে মাল্টিডিসিপ্লিনারি মুক্ত চিন্তার একটি জায়গা। দেশের প্রথিতযশা সচিবরা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের। শেখ কামাল ও সুলতানা কামাল সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন। মাল্টিডিসিপ্লিনারি রিসার্চের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অনুদানও দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পাবলিক পরীক্ষাগুলো বারবার ঝুলে পড়ার বিষয়টি খুবই চিন্তার। আমি লক্ষ্য করেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ-ছয়জন শিক্ষার্থী এরই মধ্যে আত্মহত্যা করেছে। কারণ বিভিন্ন থাকতে পারে কিন্তু এই যে শিক্ষার্থীদের সময় দেওয়া, পিআর গ্রুপ আর নেই। এখন সবাই ঘরমুখী। অনেকের টিউশন নেই। যারা টুকিটাকি কাজ করত তাও বন্ধ। এরপরে যখন আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে পারছি না। এখন সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি আবার অনেকেই মাস্ক না পরে ঘোরাফেরা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই এর মধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন। এই অবস্থায় আমরা যে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা নিতে পারছি না দীর্ঘমেয়াদে এর মূল্য আমাদের দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যে নিউ নরমাল লাইফে আমরা যাব সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা শিক্ষাবিদদের ভাবতে হবে। এখানে অবশ্যই আমাদের অনেক ধরনের ওয়ার্কশপ, ব্রেনস্ট্রমিং শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে হওয়া প্রয়োজন। উন্নত বিশ্বে শিক্ষার এই ক্ষতি তারা সামলে ওঠার চেষ্টা করছে। কারণ তাদের সেই অবকাঠামো আছে। কিন্তু মহামারীতে এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার সামর্থ্য আমাদের নেই। এ জন্য সময় নষ্ট না করে এখনই অনলাইনে কীভাবে শিক্ষাদান করা যায়, কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় এবং এই প্রক্রিয়া থেকে একটি শিক্ষার্থীও যাতে বাদ না পড়ে তা লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের প্রান্তিক অঞ্চলে যে তথ্যকেন্দ্রগুলো আছে তা ব্যবহার করতে হবে। আমাদের যেখানে যা স্থাপনা আছে সেগুলো যদি ইন্টারনেট সুবিধাসহ শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেই তাহলে শিক্ষার্থীদের আমরা পড়ালেখায় ফেরাতে পারব।