জিহাদ হোসাইন,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
অবৈধভাবে নদী ও খাল থেকে দিনের পর দিন বালু উত্তোলন যেনো একটি মহোৎসব হয়ে দাড়িয়েছে।প্রশাসনকে বৃদ্ধা-আঙ্গুলি দেখিয়ে দিনদুপুরে চলছে মহোৎসবের এমন চিত্র পুরো লক্ষ্মীপুর জুড়ে।দেশে আইন বলতে একটি কথা সেটি হয়ত ভুলে অবৈধ বালু ব্যাবসায়ীরা। প্রশাসনিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অবৈধতা বালু ব্যাবসায়ীরা বুনে গেছে লাখোপতি থেকে কোটিপতি।
ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পাড়ে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।ফলে নদীগর্ভে অনেক বসতবাড়ি, ফসলের জমি ও রাস্তা-ঘাট বিলীন হয়ে গেছে।এতে স্থানীয়দের মাজে চরম দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়।কয়েক বছর ধরে হেভিওয়েট ড্রেজার মেশিনের সংখ্যা দিন দিন গাণিতিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এনিয়ে প্রশাসনকে বারবার লিখিত ও মুঠোফোনে অবহিত করেও কোন ফলপ্রসূ হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিাযোগ। এমন ভয়াবহ বালু উত্তোলনের ঘটনায় জড়িত রয়েছে পুরো লক্ষ্মীপুর জুড়ে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ জন।লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১নং উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড বেড়ির খাল,চররমনী ইউনিয়নর নদীর পাড়,চররুহিতা ইউনিয়নের বেড়ীর মাথা,রায়পুর উপজেলার উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের সাজু মোল্লার ঘাট,মেঘনা বাজার, উত্তর চরবংশী ইউপির আলতাফ মাষ্টারের মাছ ঘাট সংলগ্ন এলাকা,পুরানবেড়ীর চান্দের খাল,কুচিয়ামোরার নতুন ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা, হাজীমারা সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদী,দক্ষিণ চরবংশী ইউপির; চরলক্ষ্মীর ডাকাতিয়া নদী, ছৈয়াল বাজার সহ রামগঞ্জও রামগতিতে অসংখ্য বালু ব্যাবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।
চক্রগুলো দিনমুজুর হিসেবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দিন-রাত দুই ধাপে বাড়ায় লোক খাটিয়ে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।চক্রগুলোর মধ্যে সদর উপজেলার হামছাদী ইউপির সেলিম পাটোয়ারী নামক জনৈক ব্যক্তি,চররুহিতার জুলহাস,রায়পুর উপজেলার উত্তর চরআবাবিলে মেঘনা বাজারের মিজান বেপারী,উত্তর চরবংশীর ইউপির বিল্লাল কবিরাজ,শিমুল লষ্কর,আলমগীর বেপারী,পুড়ান বেড়ীর জাকির বেপারী,খাসের হাট বাজারের গাজী বাড়ীর জসিম গাজী,বংশী বাজারের সেলিম কবিরাজ এবং দক্ষিণ চরবংশী ইউপির শাহাজালাল,জাকির মোল্লা,আবুল হোসেন ,আবুল হাশেম মেম্বার সহ প্রমুখ।
এনিয়ে বারবার কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যাবস্থা না নেওয়ায় অবৈধ বালু ব্যাবসায়ীর চক্রগুলো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠেছে।
বালু উত্তোলনের কারনে বন্যা রক্ষার বেড়ীবাঁধ, রাাস্তাঘাট,পুল কালবার্ট,বসতবাড়ি ও ফসলের জমি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোন সময় বেড়ি ভেঙে পড়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে কয়েকটি রাস্তা, অনেকেগুলো কালভাট, বসতবাড়ি ও ফসলি জমির ব্যাপক হয়েছে।
স্থানীয়রা বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ সহ নানা কর্মসূচি পালন করার পাশাপাশি সংবাদকর্মীরা মুঠোফোনে সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড ও নিবার্হী অফিসারকে জানালেও বালু উত্তোলন থেমে থাকেনি। স্থানীয়দের মধ্যে বাচ্চু নামের একজন জানিয়েছেন- ‘আমরা বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন করেছি কেন সে কারণে বালুখেকো সেলিম পাটওয়ারী মামলা দিয়ে আমাদের উল্টো হয়রানি করেছে।’এছাড়াও রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউপির শিমুল লষ্কর’কে বালু উত্তোলনে নিষেধ প্রদান করলে সংবাদ কর্মীদের চাঁদাবাজি মামলা দেওয়ার হুমকি প্রদান করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অনেকেই জানান-‘ প্রশাসনিক প্রতিকার চেয়ে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয়না।’ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তি জানান-‘একবার ইউএনও অফিস থেকে এক লোক এসে হ্যান্ডেল নিয়ে গেছে। পরের দিন আবার মেশিন চলছে, বালু উত্তোলন চলছে। আমরা প্রতিবাদ করলে শত্রু হই, মামলার আসামি হই।’
সূত্রে জানা যায়, যে প্রতিবাদ করতে আসে তাকেই চাঁদাবাজির মামলায় আসামি করে হয়রানি করা হয় বলে জানা গেছে। সে কারণে ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না।
এবিষয়ে চাঁদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শক উত্তম কুমারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,’আমি এটা জানিনা, এখন আপনার কাছে শুনেছি। বিষয়টি স্যারকে অবগত করব।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম বলেন,’আমি লক্ষ্মীপুরে নতুন পদায়ন করেছি, আপনি একটু কষ্ট করে এসিল্যান্ডের নাম্বারে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করুন।’
এদিকে রায়পুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) আখতার জাহান সাথী’ বলেন,’অভিযোগ পেয়েছি।সময়-সুযোগ হলে সরেজমিনে যাওয়া হবে’।
রায়পুর উপজেলার নিবার্হী অফিসার সাবরীন চৌধুরী বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছ।সংবাদ কর্মীরা কি কখনো ভুক্তভোগীর হয়ে লিখিত অভিাযোগ করতে পারবে কিনা? সুদুত্তরে বলেন, বিষয়টি আমলে নিয়েছি।প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন-‘এ বিষয়ে নির্বাহি অফিসারকে জানান। তাকে অবগত করলে বিষয়টি ক্লিয়ার হবেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন-‘আমি বিষয়টি শুনেছি, তবে আমরা কোন প্রতিকার নিলে সেলিম পাটোয়ারী হাইকোর্ট থেকে রায় নিয়ে আসেন।এতে আমাদের আর করার কিছুই থাকে না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকৌশলী বলেন-‘আমরা যদি তাকে কোন প্রকার অথেন্টিক কিছু দিয়ে থাকি তবে তা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ক্যানসেল করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Leave a Reply