আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নানা কল্পনা জল্পনার মধ্য দিয়ে পৌরসভা নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আব্দুল গণি পুনরায় বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে ৫৬ হাজার ৮০৪ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র আলহাজ¦ রেফাতউল্লাহ ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৩০ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মোশারফ হোসেন হাত পাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৯৯৪ ভোট।
রবিবার (১৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় সাভার সরকারি কলেজ অবস্থিত অস্থায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সরকারিভাবে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
এর আগে প্রাথমিকভাবে শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রতিটি কেন্দ্রের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ফলাফল জানান জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুনির হোসাইন। সাভার পৌরসভায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটার ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন শেষ হয়েছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতির হার ছিলো কম।
সাভার পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব মো: রেফাতউল্লাহ শনিবার রাতে এ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, অনেক ভোটারই তার কাছে অভিযোগ করে বলেছেন বুথে ঢুকে আওয়ামী লীগের লোকজন মেয়র প্রার্থীর ভোট নৌকা মার্কায় দিয়ে দিয়েছে। অনেক কেন্দ্র থেকেই তাঁর এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁর নির্বচনী পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলে জানান।
সাভার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে রমজান আহম্মেদ উট পাখি মার্কায় ৬ হাজার ৯০ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ মিনহাজ উদ্দিন মোল্লা পানির বোতল মার্কায় ২ হাজার ৬২০ ভোট, এরশাদুর রহমান ব্রীজ প্রতীকে ১ হাজার ৫৪ ভোট ও আব্দুল কাদের ডালিম মার্কায় ৯২১ ভোট পেয়েছেন।
সাভার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে কোন প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা।
সাভার পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে সানজিদা শারমিন মুক্তা পানির বোতল মার্কায় ১ হাজার ৯৮৭ ভোট পেয়ে পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মফিজুল ইসলাম পাঞ্জাবি মার্কায় ১ হাজার ৫৯৩ ভোট, মোশারফ হোসেন ডালিম মার্কায় ৯০৭ ভোট, মো: আব্দুল আউয়াল মামুন উট পাখি প্রতীকে ৬০৮ ভোট, কাজী আশফাক উদ্দিন টেবিল ল্যাম্প মার্কায় ৪২৭ ভোট ও জাকির হোসেন ব্রীজ মার্কায় ১৫৮ভোট পেয়েছেন।
সাভার পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডে নূরে আলম সিদ্দিকী নিউটন ফাইল কেবিনেট মার্কায় ৩ হাজার ১৯৩ ভোট পেয়ে পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাহিদুল ইসলাম উট পাখি প্রতীকে ১ হাজার ৮১৮ ভোট পেয়েছেন ও আব্দুল জলিল মিয়া টেবিল ল্যাম্প মার্কায় ৫৯৯ ভোট পেয়েয়েছেন।
সাভার পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে মশিউর রহমান খান সম্রাট ব্লাক বোর্ড মার্কায় ২ হাজার ১১২ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দিলু উট পাখি মার্কায় ২ হাজার ৯১ ভোট, ফেরদৌস আহমেদ প্রদীপ টেবিল ল্যাম্প মার্কায় ৫০০ ভোট, মোয়াজ্জেম হোসেন (আহম্মেদ রুবেল) পানির বোতল মার্কায় ৩২৭ ভোট, ইমরান হোসেন রনি পাঞ্জাবি মার্কায় ৩১৭ ভোট, এমএম জাহেরুল আহসান ফারুক ডালিম মার্কায় ১১৮ ভোট ও শিউলি পারভীন গাজর প্রতীকে ২৪ ভোট পেয়েছেন।
সাভার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে আব্দুস সাত্তার উট পাখি মার্কায় ২ হাজার ৯৩৭ ভোট পেয়ে পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মো: হোসেন আলী টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ২ হাজার ৭৩০ ভোট, আবু সাঈদ ব্রীজ মার্কায় ১ হাজার ৫৭৬ ভোট, ফারুক মাহমুদ ডালিম মার্কায় ৭৩৫ ভোট, মনিরুল হক ব্লাক বোর্ড মার্কায় ৫৮১ ভোট, মো: আহসান উল্লাহ পানির বোতল মার্কায় ৪৮০ ভোট ও কামরুল আহসান পাঞ্জাবি মার্কায় ১০৮ ভোট পেয়েছেন।
সাভার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে আব্দুর রহমান পানির বোতল মার্কায় ২ হাজার ৯৪৫ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাস উদ্দিন ডালিম মার্কায় ২ হাজার ৬০২ ভোট, হাফিজ উদ্দিন পাঞ্জাবি মার্কায় ১ হাজার ১১৩ ভোট, মো: ইউনুস পারভেজ টেবিল ল্যাম্প মার্কায় ৬৪৮ ভোট, রুহুল আমিন গাজর মার্কায় ১৮৮ ভোট ও কাদের মোল্লা উট পাখি প্রতীকে ১২০ ভোট পেয়েছেন।
সাভার পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে সেলিম মিয়া ডালিম মার্কায় ৬ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়ে পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনির পালোয়ান উট পাখি প্রতীকে ৩ হাজার ৬০ ভোট ও নাহিদুল ইসলাম পানির বোতল মার্কায় ১৯৮ ভোট পেয়েছেন।
সাভার পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে আনিসুজ্জামান ডালিম মার্কায় ২ হাজার ৬২৪ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আয়নাল হক গেদু পানির বোতল মার্কায় ২ হাজার ৫৮৭ ভোট পেয়েয়েছেন ও আশরাফুল ইসলাম উট পাখি প্রতীকে ৮৭৪ ভোট পেয়েছেন।
অন্যদিকে দিকে ১ নং সংরক্ষিত নারী আসনে ইয়াসমিন আক্তার সাথী চশমা মার্কায় ৮ হাজার ৬০৮ ভোট পেয়ে টানা ৪র্থবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফরিদা ইয়াসমিন অটোরিক্সা মার্কায় ৪ হাজার ৩৯১ ভোট, রাহিমা আক্তার আনারস প্রতীকে ১ হাজার ৩৪৬ ভোট ও শামীমা আক্তার মুন্নি টেলিফোন প্রতীকে..ভোট পেয়েছেন।
২ নং সংরক্ষিত নারী আসনে মিসেস ডারফিন আক্তার চশমা প্রতীকে ১৬ হাজার ভোট পেয়ে পরপর ৩ বারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হেনা আক্তার আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়েছেন।
৩ নং সংরক্ষিত নারী আসনে এডভোকেট সুলতানা রাজিয়া চশমা প্রতীকে ১৫ হাজার ৬৬৩ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শাহিনুর আক্তার টেলিফোন মার্কায় ৬ হাজার ২১২ ভোট ও সুমি আক্তার আনারস প্রতীকে ১ হাজার ৩৩৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, কাউন্সিলর পদে ৪০ জন এবং মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সাভার পৌরসভায় মোট ভোটার ছিলো ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৪ হাজার ৫৮৭ জন ও মহিলা ভোটার ৯৩ হাজার ৫০১ জন।
সাভার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, কাউন্সিলর পদে ৪৯ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে গত ২৯ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১ জন মেয়র ও ৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১ জন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।