ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আয় কমে যাওয়ায় মানুষ যখন সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারছেন না ঠিক তখনও নিয়ন্ত্রণে নেই নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারে চলছে চরম অস্থিরতা। চাল, রসুন, পেঁয়াজ, আলুসহ অন্তত ১০ ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। সবজির দামও বাড়তি। রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের খবর নিয়ে দর বৃদ্ধির এসব তথ্য জানা গেছে। সঙ্কটকালীন সময়েও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না এমন অভিযোগ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বল্প আয়ের ক্রেতারা।
একজন ক্রেতা জানান, ‘রোজার সময় দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।’ সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য কষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকার গোপীবাগ এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, ‘গত মাসে অর্ধেক বেতন পেয়েছি। বাসা ভাড়া দিতেই সেই টাকা শেষ। এমন পরিস্থিতিতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এখন ব্যাংক থেকে জমানো টাকা উঠিয়ে বাজার করতে হচ্ছে।
ঢাকার প্রায় সব বাজারের অবস্থা প্রায় একই। একাধিক বাজারের খবর নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে চাল, আলু, ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মসুর ডাল, পাম ওয়েল ও এলাচের। এছাড়া, বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজিও। ক্রেতারা বলেন, ‘আলু, পটল, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়সসহ সব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’ সেগুনবাগিচা বাজারের একজন সবজি বিক্রেতা জানান, ‘গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, সে কারণে বাজারে সবজি আসছে কম। ফলে সরবরাহ কম হওয়ায় সব ধরনের সবজির দামই এখন বাড়তি।’ তিনি বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। আর কয়েকটি সবজির কেজি একশ’ টাকা ছুঁয়েছে।’
বাজারে দেখা গেছে, ৪০ টাকা দরের বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। ২০ টাকা দামের গাজর প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। ২০ টাকা কেজির পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। এছাড়া, বরবটির কেজি ৬০-৮০ টাকা। কিছু দিন আগেও এই বরবটির কেজি ছিল ৪০ টাকা। চিচিংগার কেজি ৫০-৬০ টাকা, ৪০ টাকা কেজি পেঁপে, ঝিঙা ও পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। ৪০ টাকা কেজির করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা, কচুর লতি ৪০-৬০ টাকা, কচুমুখী ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি।
বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৪৫ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১০০-১২০ টাকার মধ্যে ছিল। আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে যা ছিল ১২০-১৫০ টাকার মধ্যে।
এদিকে নতুন ধান উঠলেও বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে গরিবের মোটা চাল ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকা কেজি দরে। একইভাবে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি। যদিও এই চাল গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে। আর ৬৪ টাকা কেজি চিকন মিনিকেট ও নাজির বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি দরে। তবে বাজারে মিনিকেট ও নাজির চাল প্রকারভেদে ৫৬ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। মোটা (ভালো) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে।
এদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। গত সপ্তাহে যে মুরগির দাম ১৪০ টাকা কেজি ছিল, এ সপ্তাহে সেই মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা কেজি দরে। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা কেজি। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০-৬০০ টাকা। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা।