রোস্তম আলী: রংপুর
রংপুর নগরীর নর্দান প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতারণার অভিযোগে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। নগরীর ধাপ বুড়িরহাট রোড এলাকায় নর্দান প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে ও মাইগ্রেশনের দাবিতে সোমবার দুপুরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সামনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বিভাগের সচিব এ এইচ এম এনায়েত হোসেনকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন৷
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নর্দান মেডিক্যাল কলেজে নেপাল থেকে আসা ৪০ জন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন আবাসিক ব্যবস্থা নেই, শিক্ষক নেই, বিএমডিসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অনুমোদন নেই। তার পরেও প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করে আসছেন। কর্তৃপক্ষ বার বার আশ্বাস দেওয়ার পরেও কোর্স পরিচালনায় কোনও অনুমোদন আনতে পারেনি। যারা শেষ বর্ষ পাশ করেছেন তাদের ইন্টার্নশিপের কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। ধার করা রোগী ও শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করিয়ে তাদের প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষা জীবন ধ্বংস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। নেপাল থেকে কলেজটিতে পড়তে আসা সারমা ও নারমিন অভিযোগ করেন, তারা পড়াশোনা করতে এসেছিলেন। তাদের অনেক ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখানে লেখাপড়ার নামে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক, ধার করা শিক্ষক দিয়ে মাঝে মধ্যে ক্লাস নেওয়া হলেও ইন্টার্নশিপের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে তাদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রবিবার রাতে কলেজের ভাড়া করা মেস থেকে বাসার মালিক তাদের সুকৌশলে বের করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। এ অবস্থায় অন্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা৷ শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, আমাদের বাবা-মা জমি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে এখানে ভর্তি করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ যে প্রতারক, তা আমরা জানতাম না। বিএমডিসি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অনুমোদন নেই সেটাও আমাদের বলা হয়নি। এমন অবস্থায় আমাদের শিক্ষা জীবন রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
সোমবার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বিভাগের সচিব এ এইচ এম এনায়েত হোসেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন শীর্ষক সেমিনারে যোগদান করে চলে যাওয়ার সময় দুপুরে শিক্ষার্থীরা তাকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীরা তাদের মাইগ্রেশন করে অন্য মেডিক্যাল কলেজে লেখাপড়া করার সুযোগ দানের দাবি জানান। এ সময় স্বাস্থ্য সচিব বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান।
এদিকে নেপালি শিক্ষার্থী রামেজ জেটাল বলেন, রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে আমাদের ৩২ জনকে হোস্টেল থেকে বেরকরে দেয় বাড়ির মালিক। কেন আমাদের এভাবে বের করে দিল তা আমরা জানিনা। ‘আমরা তো এই দেশের না। এভাবে বের করে দিলে কোথায় যাব? আমরা যেন বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে যাই, সে জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ সুকৌশলে এই কাজ করছে।’
নেপালি শিক্ষার্থী সংগীত সাহা বলেন, আমরা যখন ভর্তি হই, তখন হোস্টেল খরচ ও কলেজের সব টাকা একবারেই দিই। তো হোস্টেল থেকে বের করে দিবে কেন আমাদের? এক মাস আগে আমরা যখন আন্দোলন করেছি তখন তারা এক মাসের সময় চায়, আমরা সময় দিয়েছি। কিন্ত কই ইন্টার্নশিপ তো করতে পারছিনা। আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে সঙ্গে টাকাও নেই। এম্বাসিতে গিয়েছি তারাও কিছু করছেন না। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রওনক বলেন, এমন বিপদের সময় আমরা নেপালী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের সহায়তা করায় আমাদেরকেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। নর্দান মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, নেপালী শিক্ষার্থীদের আবাসিক হোস্টেল হিসেবে নুরুল ইসলামের চার তলা ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটভাড়া নেওয়া হয়। ১১ মাসের ভাড়া বাকি থাকলেও কিছু টাকা পরিশোধ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে একটি অসাধু মহল পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা সাজিয়েছে।
আবাসিক ভবন মালিক নরুল ইসলাম জানান, এই তিনটি ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ৬৫ হাজার টাকা হিসেবে গত আট মাসের ভাড়া বকেয়া আছে। এ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করলেও তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে ব্যাংক ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে তিনি শিক্ষার্থীদের আগে থেকেই বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। রবিবার রাতে শিক্ষার্থীরা বাইরে গেলে ভবনের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেন তিনি।
এদিকে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান, অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নেপালীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে তারা সবসময় সচেষ্ট আছেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। রাতেই নেপালী শিক্ষার্থীদের তাদের আবাসিক ভবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।