ছয় বছরের ছোট্ট শিশু হিয়া কিছুক্ষণ পরপর ‘মা, মাগো, বাবা, বাবা ‘ বলে কাতরাচ্ছে। মেয়ের সেই কাতর শব্দে তার মা মনিকার কলিজাটাতে ভিজে কাপড় চিপে জল ফেলার মতো মোচড় পড়ছে!
তিনদিন হতে চললো ওর জ্বর কমছে না কিছুতেই। গায়ে হাত দিলে গরম ছ্যাঁকা লাগার মতো হাত সরিয়ে আনতে হয় আর হিয়া’র মা মনিকার ভেতরটা হিম ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
আধা ঘণ্টা পরপর মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢালা, গা স্পঞ্জ করা, জলপট্টি দেয়া কিছুই তো বাদ রাখছে না। সেই সঙ্গে ওষুধ তো আছেই কিন্তু জ্বর নামার কোনো লক্ষণ নেই! ডাক্তার তিনদিনে দুইবার ঘরে এসে আশ্বাস দিয়ে গেছেন- ‘ঠিক হয়ে যাবে। দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি সকাল বিকাল এসে দেখে যাবো।’
মনিকার মন মানে না। কাজের মেয়েটি বাথরুম আর ঘরে পানি আনা নেয়া করতে করতে ক্লান্ত। মনিকাও অবসন্ন। মনে নানা কুচিন্তা মনিকাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না।
একমনে জায়নামাজে সেজদায় গিয়ে আল্লাহকে বলে: আল্লাহ, তুমি আমার বুকের ধন, একমাত্র অবলম্বন সোনা মানিক মেয়েটিকে ভালো করে দাও। আমাকে উপায় বলে দাও, আমি কোথা থেকে মেয়ের বাবাকে এনে দেবো? তুমি তো আমাকে একলা করে ফেলে তার বাবাকে নিয়ে গেছো। তোমাকে সবাই দয়াল বলে। তুমি কি আমার কাতর অনুনয় শুনতে পাচ্ছো দয়াল? দয়া করো। দয়া করো।
মেয়ের খাটের পাশে নামাজ পড়ছিলো মনিকা। সালাম ফেরাতেই দরজায় কলিং বেলের শব্দ হলো। এতো রাতে কে এলো আবার! কাজের মেয়েটিকে ইশারা করতে সে গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসে বললো, ‘আপামনি, কইলো ওনার নাম শুভ্র। আর কিছু কয় নাই।’
গরমের ছুটির জন্য এখন মনিকার স্কুল বন্ধ চলছে। স্কুলে শুভ্র মনিকার পছন্দের কলিগ।
দুই বছরের ওপর তার সঙ্গে মনিকার পরিচয়। আজ পর্যন্ত সে কোনদিন মনিকার বাসায় আসেনি। মনিকা ভাবছে, রাত দশটার ওপরে বাজে! এতো রাতে! ওর কি আসার কথা ছিলো!
শুভ্র আহমেদ। স্কুলে মনিকার পাশের টেবিলেই বসে। ইংরেজীর শিক্ষক। ছেলেমেয়েদের খুব পছন্দের স্যার সে। সুদর্শন তবে মুখচোরা, লাজুক প্রকৃতির এই যুবক সবার সঙ্গে নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। চুপচাপ প্রকৃতির, মনিকার পাশের টেবিলে বসতে হয় বলেই মনে হয় পড়ানোর ফাঁকে যা দুই চারটে কথা বলে তা মনিকার সঙ্গেই। মন খুলেও কথা বলে কখনও কখনও। তাও মনিকা প্রশ্রয় দিলে।
ওর সঙ্গে কথা বলে মনিকা যতোদূর জেনেছে, এই শহরে নিজেদের ভিটে মাটিতে মা এবং ছেলে শুভ্র’র সংসার। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শহীদ হয়েছেন। ভিক্ষুকের মতো সরকারের কাছে হাত পাতেনি মা ও ছেলে।
গ্রামের বাড়িতে জায়গা জিরাত যা আছে তাতে কমতি হয়নি ওদের। শিক্ষকতা পেশার মান সম্মান নিয়ে সে খুব সচেতন। নীতিবান। স্কুলে পড়ানোর বাইরে শুভ্র টিউশনিরও ঘোর বিরোধী। তার দরকারই বা কি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা আয়ে তার রুচি নেই।
স্কুলে গত দুই বছর ধরে তাকে দেখছে মনিকা।
মেয়েরা তো নাকি ছেলেদের মুখ দেখলেই অনেক কিছু বোঝে। হয়তো বা। কিন্তু মনিকা শুভ্রকে বুঝবে কি, সেতো নিজেকেই বুঝে ওঠতে পারেনা। ওকে দেখলে কেন জানি মনিকার ভালো লাগে, না দেখলে কেন তার মন কেমন কেমন করে!
সেজন্য স্কুল বন্ধ থাকলে মনিকার দিন কাটে না, রাত কাটে না। স্কুল খোলা থাকলে মনিকার মনে খোলা হাওয়া লাগে। এই কথা আর কেউ জানে না। শুধু মনিকাই জানে। আর জানে বলেই এখন মনিকার এই দুঃসময়ে শুভ্র ঘরে এলো বলে ভালো লাগছে। আবার বুক কাঁপছেও।
বস্তুত এই শহরে খোঁজ নেয়ার মতো মনিকার আত্মীয় পরিজন কেউ নেই।
নদী পাড়ভাঙা একটি পরিবার। মনিকা শুনেছে, শহরে এসেছে মনিকা বাবা-মায়ের সঙ্গে। ভাগ্যচক্রে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনের চাকরি পেয়ে বাবা কুমিল্লার মোগলটুলিতে জায়গা কিনে দোচালা মাথাগোঁজার ঠাই তুলে থিতু হয়ে যান। তাদের একমাত্র মেয়ে মনিকা।
মনিকা সত্যি সত্যিই খুব সুন্দরী ছিলো। সুন্দরী মেয়েরা সমাজে সংসারে অনিরাপদ ভেবেই কি না এইচ এস সি পাস করার পর মনিকার বিয়ে হয়ে গেল এই শহরেই ধনাঢ্য পরিবারের ব্যবসায়ী ছেলের সঙ্গে। কিন্তু সুখ সইলো না।
হিয়া জন্মের এক বছরের মাথায় সাইদাবাদ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘরে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মারা গেল হিয়া’র বাবা। শোকের সময়ে অপয়া অপবাদ মাথায় নিয়ে মনিকা ফিরে আসতে বাধ্য হলো বাবা-মায়ের কাছে।
অপবাদের সেই কষ্টেই নিজেকে আবার বিয়ের মোহ থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। বাবা-মায়ের শত অনুরোধ সত্ত্বেও বিয়ে করতে না চাওয়ার একগুঁয়েমির জন্য হতাশায়, দুশ্চিন্তায় দুজনেই দুনিয়া থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে একে একে পালালেন। তখন হিয়া’র বয়স তিন।
তারপর সংসারে শেয়াল কুকুরের খাবার হবে না কি এই আতঙ্কে ভেঙে না পড়ে মনের জোরে নিজেকে একজন মেয়ে না ভেবে মানুষ বলে ভাবতে শুরু করে মনিকা। পাড়ার আশপাশে মা-বাবার পরিচিত অনাত্মীয় হৃদয়বান মানুষেরা মনিকাকে অভয় দিলেন। মনে শক্তি পায় মনিকা।
সেই সময় বাবার বন্ধু শুভানুধ্যায়ী এক চাচার সহায়তায় নজরুল মেমোরিয়াল একাডেমিতে শিক্ষকতার চাকরিটা পেয়ে অথৈ সাগরে যেন হালে পানি পায় মনিকা।
এরপর মেয়ে হিয়াকে একটা ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে স্কুল এবং পড়াশোনা করে এরই মধ্যে এম এ টাও পাস করে নিয়েছে। এখন মা-মেয়ে একই স্কুলে। একই ক্যাম্পাসে এক প্রান্তে শিশু বিদ্যালয়ে হিয়া ক্লাস টুতে পড়ে মনিকা অন্য প্রান্তে হাইস্কুল সেকশনে পড়ায়।
স্কুলে মহিলা কলিগদের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক ছাড়া মনিকা তাদের এড়িয়ে চলে। কেননা ওরা শুধুই মহিলা। নিজেকে মানুষ ভাবার মনোজোর ওদের মাঝে দেখেনি মনিকা। আর জনা পাঁচেক পুরুষ শিক্ষক যারা আছেন তারাও অনেকটা ওদের মতোই। ‘হংস মাঝে বক যথা’র মতো শুভ্র এই সবের ভেতরে পুরোই ব্যতিক্রম।
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে দরজাটা খুলতে একটু দেরি হয়ে গেলো।
না কি ইচ্ছে করেই দেরি করে ফেললো মনিকা! ঘরে ঢুকে খানিকটা বিব্রত শুভ্র ক্ষমা চাইলো এতো রাতে আসার জন্যে। মুখ নিচু যথারীতি। জিজ্ঞেস করলো: হিয়া কেমন আছে এখন?
মনিকা ওর চোখ দেখার জন্যে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মনিকা বললো: আগের মতোই। জ্বরটা নামছে না। যখনই কথা বলছে, আমাকে সে জিজ্ঞেস করছে, মা আমার বাবা কি এসেছে? তুমি-না বলেছো, আসবে। আসবে মা? বলে আমাকে প্রশ্ন করছে।
গত তিন দিনের মানসিক ধকলের মধ্য দিয়ে এসে আজ একজন কাছের মানুষ পেয়ে মুখোমুখি সোফায় বসতে বসতে মনিকা ফ্যাসফ্যাসে গলায় আবার বললো: শুভ্র সাহেব, আমি আমার নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই জড়িয়ে গেছি।
আমি এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। কেন যে মেয়েকে মিথ্যে বলে সত্যটা লুকোতে গেলাম? আপনি তো সবই জানেন, আমি এখন কী করে মেয়েটাকে বাঁচাই?
শুভ্র আগের মতোই চোখ মুখ নিচু করে বললো: কিচ্ছু ভাববেন না, আমি কাল বিকেলে মাকে নিয়ে আসবো।
মনিকা মাথা নেড়ে বলে: আচ্ছা।
শুভ্র চলে যাওয়ার পর মনিকা ভেবে কোনো কূল কিনারা পেলো না, মনিকার কথার জবাবে তার মাকে নিয়ে বাসায় আসার সম্পর্ক কি!
মনিকা নিজের ফাঁদে নিজে জড়িয়ে পড়ার বিপদে পড়লো মাস ছ’য়েক আগে।
হিয়া স্কুল থেকে একদিন বাসায় ফিরে এলে মনিকা লক্ষ্য করে, অন্যদিনের মতো সে কথা বলছে না। খেতে বললে খেতে চাইছে না। বিকালে ঘরের উঠোনে প্রতিবেশী ওর বন্ধুদের সঙ্গে খেলতেও গেলো না। মুখ ভার করে ঘরে বসে রইলো।
মনিকা কয়েকবার তাকে কাছে ডাকলেও কাছে এলো তবে যা জিজ্ঞেস করে জবাব দেয় না, কোনো কথা বলে না। কেবল মুখ নিচু করে থাকে। এইটুকু মেয়ে, তার এমন আচরণ মা মনিকার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হলো না।
রাতে ঘুমোবার আগে তাকে বুকের মধ্যে আলতো চেপে ধরে মনিকা জিজ্ঞেস করলো: কি হয়েছে মা, তোমার কেন মন খারাপ আমাকে বলবে না?
হিয়া তার ছোট্ট দুটি হাত দিয়ে তার মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো: আমার বাবা নেই কেন মা? আমার বাবা কেন আমাকে স্কুল থেকে নিতে আসে না? সবার বাবা আছে আমার কেন নেই? আমার বাবা কোথায়?
হিয়া’র প্রশ্ন শুনে মনিকার বুকের ভেতরটা অব্যক্ত ব্যথায় কেমন করে ওঠলো! আবেগ সামলাতে না পেরে মনোকষ্টে ভুলটা মনিকা তখনই করে ফেললো! বললো: কে বলেছে নেই মা, তোমার বাবা আছে। তোমার বাবা বিদেশে আছে।
হিয়া’র প্রশ্ন: আসে না কেন, মা?
মনিকা মেয়ের কোঁকড়ানো চুলের মাথাটা বুকে চেপে ধরে বললো: আসবে মা, আসবে। আমাকে বলেছে তোমার বাবা, হিয়াকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। শিগগির আসছি আমি। অনেক খেলনা আনবো ওর জন্যে।
হিয়া আনন্দের স্বরে বললো: বলেছে? বাবাকে আমি চিঠি লিখবো মা।
মনিকা: লিখো। লিখে আমাকে দিও। আমি তোমার বাবাকে তোমার চিঠি পাঠিয়ে দেবো।
চিঠি লেখার সূচনা হয় হিয়ার ক্লাস থেকে। পরদিন মনিকা স্কুলে গিয়ে হিয়া’র শ্রেণী শিক্ষক আয়েশা ম্যাডামের কাছ থেকে খবর পেয়ে গিয়ে শুনলো তিনি ঐদিন ক্লাসে বাচ্চাদের বাবা বিষয়ে পাঁচটি বাক্য লেখান।
হিয়া লিখে দেয়া ওর ম্যাডামের কথাগুলো কিছুই লিখেনি। সে লিখেছে, ‘আমার বাবা নেই। আমার বাবা কেন আসে না? সবার বাবা আছে আমার বাবা নেই। ’
হিয়া’র গুটিগুটি হাতের লেখা খাতাটা দেখে মনিকা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি! এতোগুলো বছর পর মনিকার বুকের ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মাথাটা ভারী হয়ে আসে।
এরপর থেকে সেদিন রাতের কথামতো ছুটির দিনে হিয়া তার বাবাকে চিঠি লিখে মনিকাকে দেয়। মনিকা সেই চিঠিগুলো পাঠাবে তাকে বলেছি।
স্কুল থেকে ঘরে ফিরে হিয়া মনিকাকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে, ‘মা চিঠি পাঠিয়েছো? বাবা জবাব দিয়েছে? চিঠি এসেছে?
মা আশ্বাস দেয়, আসবে মা আসবে। ‘
কতোদিন এভাবে মিথ্যে আশ্বাস দেয়া যায় মেয়েকে? শুরু করলো নতুন খেলা।
রাতে মেয়ে ঘুমিয়ে গেলে মনিকা মেয়ের বাবার নামে চিঠির জবাব লিখে!
পরদিন স্কুল থেকে এলে মেয়েকে বললো: তোমার বাবার চিঠি এসেছে হিয়া।
শুনে মেয়ের সে কী খুশি। মনিকা হিয়াকে চিঠি পড়ে শোনায় আর চোখের জলে ভাসে!
হিয়া একদিন লিখে, ‘বাবা, তুমি আসো না কেন? তুমি কবে আসবে বলো। তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসো না বাবা? তুমি আসো বাবা। ‘
এই একই কথা হিয়া’র চিঠিতে থাকে প্রতি সপ্তাহে। শেষমেশ একদিন মনিকা লিখলো, ‘হিয়া মা, আমি আসছি। তুমি ভালো থেকো। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি হিয়া।
ইতি। তোমার বাবা। ‘
সেই চিঠি বুকে নিয়ে মেয়ের আহার নিদ্রা ঘুম সব উধাও। অনিয়মের চূড়ান্ত করতে লাগলো সে তার বাবার অপেক্ষায়। প্রতিটি দিন যায় আর মায়ের কাছে কেবল জানতে চায়, বাবা আসে না কেন মা? কবে আসবে?
মিথ্যের ডালপালা দিনে দিনে যতো বাড়ে মেয়ের চোখ ততো তীব্র হয় মনিকার মুখের ওপর। কি যেন খুঁজে বেড়ায় সে। কোনো তল না পেয়ে হিয়া এক সময় নেতিয়ে পড়ে। এখন তো বেহুশ।
সারারাত জায়নামাজে মেয়ের জীবন বাঁচাতে আল্লাহর কাছে কাঁদলো মনিকা। শুধু একটা কথাই বারবার বলেছে, ‘হে মাবুদ, আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে দাও। আমি এখন কী করবো উপায় বলে দাও। হিয়াকে বাঁচিয়ে দাও। ’
এভাবে সেই রাতটা মনিকার ভোর হয়েছে।
ফজরের নামাজ শেষে হিয়াকে সূরা ইয়াসীন পড়ে ফুঁ দিয়ে কপালে হাত রেখে মনে হলো, জ্বরটা যেন একটু কমে এসেছে। সকাল আটটার দিকে সে চোখ খুলে বললো: খুব ক্ষিদে পেয়েছে মা। আমাকে খেতে দাও।
মনিকা তাড়াতাড়ি দুধ রুটি নরম করে ওকে চামচ দিয়ে খাওয়ালো। যতোটুকু দিলো সবটাই খেয়ে মাকে কাছে ডেকে মেয়ে বললো: মা আমি স্বপ্নে দেখেছি। আজ বাবা আসবে।
এমন কথা শুনে মনিকার অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে! মনিকা হিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। মেয়ে হাসে। অমলিন শুভ্রতায়।
গোধুলী লগ্নে দরজার কলিং বেল বেজে ওঠলো।
মনিকা এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলে।
মেয়ে দরজা খোলার আওয়াজে বিছানা থেকেই বলে ওঠে: মা দরজা খোলো। দেখো, বাবা এসেছে মনে হয়।
হিয়া’র স্বপ্নের কথা শোনার পর থেকে মনিকার বুকের কাঁপুনি এখনও থামেনি। পা দুটো থরথর করছে!
কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলতেই সৌম্য সুন্দর যিনি প্রথমে ঘরে ঢুকলেন বুঝতে কষ্ট হলো না, তিনি শুভ্র’র মা। তার পেছনে কুণ্ঠিত পায়ে এক হাতে ফুলের তোড়া অন্য হাতে খেলনার বাক্স নিয়ে শুভ্র। ওর মা হাসিমুখে এগিয়ে এসে মনিকার মাথায় হাত রেখে বললেন,
তুমি কি আমার ছেলের বউ হবে মা?
মনিকা বিষ্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলো! এ বিষ্ময় আনন্দের! মনিকা শুভ্রকে খুঁজছিলো ওর চোখে চোখ রাখার অভিপ্রায়ে।
ঘরের ভেতর থেকে ওঠে এসে হিয়া ‘বাবা, তুমি এসেছো’- বলে মত্ত উল্লাসে শুভ্র’র বুকে ঝাপিয়ে পড়ে!
‘হ্যাঁ মা, আমি এসেছি’ বলে পরম মমতায় হিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুভ্র।