আশিকুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশে নতুন মোড় নিচ্ছে নোভেল করোনা ভাইরাস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী সোমবার (১৫ মার্চ) ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে নতুনভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৭৭৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। এনিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নোভেল করোনা ভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫৯১৬৮ জন এবং মোট মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫৭১ জনে।
গত বছরের ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি করার পর, অন্যান্য দেশের থেকে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অনেকটাই সফল হয়েছে। পাশাপাশি কিছু সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রত্যক্ষ সমন্বয়ে করোনা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এসেছিলো। এরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় সার্বিক দিক বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ধাপে ধাপে ৩০ মার্চ ২০২১ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অপরদিকে ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্ত হঠাৎ করে পুনরায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে পুনরায় আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং সকলের মনে নতুন উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে।
বিশ্বে করোনা সংক্রমণের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, সমগ্র বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১২ কোটি মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৭ লক্ষ মানুষের। এখন পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও করোনা মহামারী তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি এবং মৃতের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছাড়িয়েছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলায় বিশ্ব দরবারে একটি অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অধিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও, অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে করোনায় সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর হার অনেকটাই কম। অবশ্য কিছু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা বা কোভিড-১৯ টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়ানো গেলে এবং সকলকে টেস্টের আওতায় নিয়ে আসা গেলে, রোগী সনাক্তের পরিমাণ হয়তো আরও বেশি হতো।
গত ২০১৯-এর ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর ২০২০-এর ফেব্রুয়ারী মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটির নাম দেয় SARS-CoV-2 বা নোভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ ডিজিজ এবং এটিকে বিশ্ব মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে পুরো বিশ্ব কার্যত অচল হয়ে পড়ে এবং বিশ্বজুড়ে একটির পর একটি দেশ সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন ও জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে থাকে। বিশ্ব অর্থনীতিতে নেমে আসে ধ্বস এবং বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
করোনা মহামারীর শুরুতে প্রথমে চীন ও পরে ইতালি সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুইটি দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অবিশ্বাস্যভাবে বাড়তে থাকে। যার ফলে মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয় ‘ম্যাস হিস্টেরিয়া’ বা জনমনে আতঙ্কের। যা প্রতিটি মহামারীর ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে, ২৬শে মার্চ, ২০২০ থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় অঘোষিত লকডাউন। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী হাতে নেওয়া সকল অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
এমনকি ইয়ুথদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী সবথেকে বড় আয়োজন বছরব্যাপী ‘ঢাকা ও.আই. সি ইয়ুথ ক্যাপিটাল-২০২০’-এর সকল সামিট এবং প্রোগ্রামসমূহ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হতে থাকে; যেখানে সারা বিশ্ব থেকে ২৫০ জন গ্লোবাল ইয়ুথ লিডার অংশগ্রহণ করছে।
বাংলাদেশে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ধীরে ধীরে কমে আসলেও, চলতি মাসে পুনরায় এর উর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয়৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে, চলতি মাসের ১৩ই মার্চ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ হতে উপসচিব শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘মাস্ক পরিধান নিশ্চিতকরণসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সংক্রান্ত’ একটি প্রজ্ঞাপন ( স্মারক নম্বরঃ ০৪.০০.০০০০.৫১২.৮২.০৬০.১৭.১৪০) জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে দেশের সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে জনসাধারণের মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ ও মনিটরিং করতে বলা হয়।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..