নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
লালমনিরহাটে জুয়েলকে পুড়িয়ে হত্যা: ইউএনওর বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ
রংপুর ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক মো. সহিদুন্নবী জুয়েলকে (৫০) পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা অভিযোগ তুলে তদন্তে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন জেলা প্রশাসক।
বুধবার দুপুরে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে এ তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় বলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর নিশ্চিত করেছেন।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে সহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত যুবক আবু ইউনুস মো. সাহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক।
গণবিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, গত ২৯ অক্টোবর পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে সহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময়ের প্রাক্তন পাটগ্রাম ইউএনও কামরুন নাহারের দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যানকে বিজ্ঞপ্তিটির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির পত্র পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) রাম কৃষ্ণ বর্মণ।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ঢাকা পোস্টকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত তদন্ত শুরু হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের চাচাত ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে হত্যাসহ পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখে আসামি শনাক্ত করে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা পায়নি। গুজব ছড়িয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও পরে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন দু’টি তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এর আগে ওসি সুমন কুমার মহন্ত বার্তা২৪ জানিয়েছিলেন, ‘ঘটনার দিন জুয়েল ও তার বন্ধু আবু জোবায়ের সুলতান আব্বাস একটি মোটরসাইকেলে চড়ে বুড়িমারী এসেছিলেন ঘুরতে। বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের পাশে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় মসজিদে আসরের নামায আদায় করেন।
নামাযের পর তিনি ওই মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদের বুকসেলফে রাখা কোরআন ও হাদিস পুস্তক দেখছিলেন। এসময় অসাবধানতা বসত একটি কোরআন বুকসেলফ থেকে পড়ে গেলে উপস্থিত খাদেম ও পাঁচ মুসল্লি চিৎকার শুরু করেন।
পরবর্তীতে কোরবান অবমাননার অভিযোগের গুজব ছড়িয়ে পড়লে এ নির্মম ঘটনা ঘটে।’
তখন তিনি আও বলেছিলেন, ‘আমরা জুয়েলকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি। তার বন্ধুকে রক্ষা করতে পেরেছি। কয়েক হাজার মানুষ ইট-পাথর ও লাঠি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে।
পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভাংচুর করে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
Surjodoy.com