কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামে লকডাউনে বিপাকে পরেছে শ্রমজীবীরা। টানা তৃতীয় দিন লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িতদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। জীবন ও জীবিকায় খড়গ নেমে আসায় বিভিন্নভাবে ঋণ করে সংসার নির্বাহ করা এসব পরিবারের কাছে লকডাউন যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। ঝুঁকি নিয়ে অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও ক্রেতার অভাবে বিক্রিবাটা বন্ধ হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম পৌরবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাজু, রমজান, রফিকুল ও কালাম জানান, লোন করে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করছি। প্রতিদিন কিস্তি দিতে হয়। এখন ব্যবসা বন্ধ। ঘর থেকে টাকা এনে কিস্তি শোধ করতে হচ্ছে। কেউ কেউ সুদের উপর টাকা নিয়ে কিস্তি দিচ্ছে। আমাদেরকে নিয়ম করে দিক। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে চাই। না হলে আমরা পথে বসবো।
খলিলগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ছামসুল জানান, ক্ষুদ্র গালামালের ব্যবসা করে আমার অসুস্থ্য স্ত্রী ও পূত্রের চিকিৎসা করছি। লকডাউনের ফলে ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। এখন চিকিৎসা ব্যয় মেটাবো কিভাবে!
বিশেষ করে শহরে যারা নির্মাণাধীন বাড়িতে কাজকর্ম করছেন তারা বিকেলে বাড়ীতে ফেরার সময় হাটবাজার করতে না পেরে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছেন। খলিলগঞ্জ বাজারের পাশে একটি ফ্লাটে কর্মরত ছকিনা ও জসমত জানান, গতকালে টেকা নিয়া বাজারোত ঢুকি দেহি সউগ দোকান বন্ধ। চাউলও কিনবের পারি নাই। তরকারিও কেনা হয় নাই। এরকম অবস্থা হয়েছে শ্রমজীবীদের।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি খন্দকার খাইরুল আলম জানান, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেয়ে তাদের রুটি রুজির উপর আঘাতের বিষয়টি ঠিকভাবে মেনে নিচ্ছে না। ফলে সরকারের উদ্যোগ সফলকাম হচ্ছে না। বেকার পরিবারগুলোর খাদ্যের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে স্থাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ রেখে সরকারকে গণপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে উর্ধ্বমূখী কোভিড-১৯ ঠেকাতে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে নানান উদ্যোগ নেয়া হলেও মানছেন না অনেকেই। জেলা প্রশাসনের প্রচারণা ও মাইকিং’র পরেও বিধি নিষেধ না মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। দিনে দু’শিফটে মোবাইল টিম মনিটরিং এবং অর্থ জরিমানা করলেও স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা না মানায় কঠোর হতে হচ্ছে তাদেরকে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজাউদ্দৌলা জানান, বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে ৩৩টি মামলায় ১৬ হাজার ১৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দন্ডবিধি ১৮৬০/২৬৯ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা তাসনিম ১৯টি মামলায় ১ হাজার ৭৫০ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ৭টি মামলায় ৭ হাজার ৯শ’ টাকা এবং সদরের এসিল্যান্ড মোস্তাফিজুর রহমান ৭টি মামলায় ৬ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করেন। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের নির্দেশনা মানতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় অভিযান চলমান থাকবে।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..