
কাজী মোতাহার হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ভরা মেঘনা, ডাকাতিয়া নদী উপকুলীয় লক্ষ্মীপুর জেলা। জেলার ৫ উপজেলায় রয়েছে কোন না কোন সময়ের ঐতিহ্য। তারই নির্দশন মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের মধ্য সাগরদী তিন গুম্বুজ বিশিষ্ট জামে মসজিদ। যা বর্তমানে সংস্কারের অভাবে বিলুপ্তি হওয়ার পথে।
পুরোনো এ মসজিদ স্থাপত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। সৃষ্টি আর ধ্বংসে এগিয়ে চলছে পৃথিবী। কেউ সৃষ্টিতে আবার কেউ ধ্বংসের খেলায় মাতিয়ে উঠেছে। আবার কারোর দায়িত্ব হীনতার কারণে কালের গহব্বরে সমাহিত হচ্ছে ঐতিহাসিক অতীত। আমরা বাঙালী, আমাদের রয়েছে সোনালী ঐতিহাসিক অতীত। বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্ন।
এসব ছড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরিত স্থানসমূহ আমাদের স্বত্তাতে আলোড়ন জাগায়। তেমনি আলোড়ন জাগানো ঐতিহাসিক অতীত বহুল স্থান রায়পুর উপজেলার মধ্য সাগরদী তিন গুম্বুজ বিশিষ্ট জামে মসজিদ।
লক্ষ্মীপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম আর রায়পুর উপজেলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে ঐতিহাসিক সাগরদী গ্রামটি অবস্থিত। বামনী ইউপির জনসংখ্যার দিক দিয়ে বড় গ্রাম এটি।
এ গ্রামেই দৃশ্যমান শত বছর পূর্বের স্থাপনা কারুকার্য্য খচিত তিন গুম্বুজ বিশিষ্ট এ জামে মসজিদ। কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে মোঘল সম্রাটের শাসনামলের ভাবধারায় নির্মিত এ কীর্তি।
গ্রামবাসী জানান, এলাকার বিশিষ্ট আলেম মৌলবী দুলা মিয়া, হাজী কালা মিয়া চৌধুরী, ছৈয়দল হক চৌধুরী, ইউছুফ মিয়া পাটওয়ারী ও ফয়েজ বক্স পাটওয়ারীর প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে এ মসজিদটি।
জানা যায়, এক সময় নিভৃত পল্লীর জনবসতি ছিল।
এক সময় নৌকার বিকল্প ছাড়া কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। সাগর থেকেই সাগরদী গ্রামের রুপায়ন হয়েছে বলেও অনেকের ধারণা। আশে পাশের ৪ গ্রামে কোন মসজিদ ছিল না। সাগরদী এলাকার নামেই তৎকালীন সময়ে মসজিদের নামকরণ হয় মধ্যসাগরদী মসজিদ।
এ মসজিদকে ঘিরেই ১৯৯৬ সনে মাওলানা নজির আহম্মেদ এখানে প্রতিষ্ঠিা করেন নূরানী ও এতিমখানা মাদ্রাসা। ২০০৬ সনে খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) দাখিল মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এর আগে ১৯৭২ সনে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাফেজীয়া মাদ্রাসা। বর্তমান এ সব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫’শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী অধ্যায়ন করছে।
এ মসজিদ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা এলাকার কেউই সঠিক ভাবে বলতে পারছেন না। তবে কেউ বলেছেন, ১৯০৫ সালের আগের, কেউ বলেছে ১৯ শতকের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আলী হায়দার পাটওয়ারী (৯০) ও হবি উল্লাহ নামে দুই গ্রামের সমাজ সেবক বলেন, আমাদের জন্মের পূর্বে এই মসজিদ স্থাপিত হয়েছে।
৭৯ শতক জমির উপর কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই স্থাপনা। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলতে বসেছে মসজিদ। সম্প্রতি দেখা যায়,
গম্বুজের চারপাশ দিয়ে ঘামতে শুরু করেছে পানি। বৃষ্টি আসলেই পানিতে ভরে যায় পুরো মসজিদ। খোদাইকৃত অনেক কারুকাজ নষ্টের পথে। মসজিদ সম্প্রসারণে এটি ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন গ্রামের একটি পক্ষ।
আরেক পক্ষ না ভেঙ্গে তা দর্শনীয় হিসেবে রেখে দিয়ে মসজিদটি পূণরায় সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এ জন্য প্রয়োজন ২০-২৫ লক্ষেরও বেশি অর্থ। যা এলাকাবাসীর পক্ষে সম্ভব না। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির সংস্কার করা হলে স্থাপনাটি ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় একটি জংসন এলাকা।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply