হাফিজা খন্দকার নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যা মামলার কিনারা হয়নি আড়াই মাসেও। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।ওইদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কটূক্তির প্রতিবাদে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের নেতৃত্বে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলে মেয়র কাদের মির্জার অনুসারীরা হামলা চালালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে পেশাগত কাজে ছবি সংগ্রহ করতে গেলে অস্ত্রধারীদের ছোড়া গুলিতে মারাত্মক আহত হন স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার ঘটনায় তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাওলানা নুরুল হুদা নোয়াব আলী বাদী হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা (নম্বর ২৬) দায়ের করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানান, সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ওইদিন নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে।বুধবার (৫ মে) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক ও শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এদেরকে রিমান্ডেও আনা হয়েছে। তবে এখনো কারো কোনো স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়নি।
এদের মধ্যে গত ৭ মার্চ বসুরহাট ডাক বাংলোর সামনে থেকে চরফকিরার বেলাল প্রকাশ পাঙ্খা বেলালকে আটক করে পিবিআই। পরে গত ১৮ মার্চ অন্য মামলায় আটককৃত ১২ জনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।
এরা হলেন, কোম্পানীগঞ্জের আলমগীর, রাহাত, আজিজুল হক মানিক, বাহাদুর, ফয়সাল আলম টিটু, বিক্রম চন্দ ভৌমিক, সুজায়েত উল্যাহ, দেলোয়ার, ইউসুফ নবী, আবদুল আমিন, মো. সেলিম ও মাসুদুর রহমান।
এরা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থক বলে পরিচিত।অন্যদিকে গত ২৩ মার্চ কারাগারে থাকা আরও তিনজনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায় পিবিআই।
এরা হলেন, উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও বসুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল হক হাসেম, চরএলাহী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক ও মুছাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইকবাল চৌধুরী।
এছাড়া গত ২৪ এপ্রিল অন্য মামলায় আটক সিরাজপুরের নাজিম উদ্দিন মিকনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায় পিবিআই। এরা চারজন বসুরহাটের মেয়র কাদের মির্জার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।নিহত সাংবাদিক মুজাক্কিরের বড় ভাই ইসলামী ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মো. নুরুদ্দিন মোহাদ্দেস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হত্যা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ায় আশান্বিত হয়েছিলাম।
কিন্তু আড়াই মাসেও কোনো কিনারা না হওয়ায় আমাদের পরিবার হতাশ।নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, মামলাটির তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে।
চিহ্নিত আরও কিছু ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে। অচিরেই এ মামলায় অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে বলেও জানান তিনি।প্রসঙ্গত, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিজ এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ সেতুমন্ত্রীর ছোটভাই বসুরহাটের মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ-সহিংসতা চলে আসছে।
এতে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাংবাদিক মুজাক্কিরসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।