নিজস্ব প্রতিবেদক:
Facebook Twitter Instagram share
স্বামীর মৃত্যুর পর ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন রেহানা আলম। চলে আসেন বাবার বাড়িতে। সেখানেই মেয়েকে নিয়ে ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে পেটের দায়ে মায়ের কাছে মেয়েকে রেখে ঢাকায় তিনি পোশাক তৈরি কারখানায় চাকরি করতে যান। সেখান যান ওমানে। মেয়ের দেখভাল এবং সঞ্চয়ের জন্য ভাইয়ের কাছে টাকা পাঠান বিদেশ থেকে। কিন্তু তিনি দেশে ফিরে এলে ভাই সরাসরি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বলে, সে কোনো টাকা দিতে পারবে না। রাতদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থ এভাবে আপন ভাই আত্মসাৎ করবে রেহানা কল্পনা করেনি কখনো। ঘটনাটি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের। আর সেই অভিযুক্ত ভাইয়ের নাম সেকেন্দার আলম।
Surjodoy.com
রেহানা আলম জানান, শুধু তার কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাতই নয়, বাবার লিখে দেওয়া বসতবাড়ির জমিও আত্মসাৎ করেছেন সেকেন্দার আলম। উল্টো সেকেন্দার ও তার স্ত্রী রেহানা এবং তার বাবাহারা মেয়েকে নির্দয়ভাবে গ্রাম ছাড়া করেছেন।
রেহানা আলম এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বোয়ালমারী প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।
The Daily surjodoy
সংবাদ সম্মেলনে রেহানা অভিযোগ করেন, ‘আমার বিয়ের ছয় বছর পর স্বামী মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার একটি কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করতে থাকি। কন্যা সন্তানটিকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকা গার্মেন্টেসে চাকরি করি। গার্মেন্টস থেকে ওমান নামে দেশে চলে যায়। আমার সকল উপার্জিত টাকা আমার ভাই সেকেন্দার আলমের নামে পাঠাই। ওই টাকা দিয়ে আমার ও আমার কন্যার ভবিষ্যৎ করে দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আমার ভাই সেই টাকা দিয়ে ভবিষ্যৎ করে দেননি এবং আমার টাকাও ফেরত দেননি।’
The Daily surjodoy
রেহানা তার সম্পদ দখলের অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মোসলেম উদ্দিন শেখ আমার বসবাস করার জন্য ৭৯৮ ও ৭৯৯ খতিয়ানের ৮৯৩ দাগের চৌহদ্দি করে চার শতক জমি গত ৬.১.২০১৯ তারীখে আমাকে দানপত্র মূলে রেজিস্ট্রি করে দেন। ওই জায়গায় গাছপালা কেটে আমি ঘর করতে গেলে আমার ভাই সেকেন্দার আলম এবং তার স্ত্রী সেলিনা বেগম ঘর করতে বাধা দেয় এবং আমাদের দুই বোনকে, বাবা মাকে মারধর করে। এ ঘটনাগুলো গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তাদের কথাও পাত্তা দেননি আমার ভাই।’
The Daily surjodoy
রেহানা জানান, তিনি ২০২০ সালের ২৭ জুলাই আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (তৎকালীণ ইউএনও রাশেদুজ্জামান) কাছে লিখিত অভিযোগ করে। পরে ইউএনও সরেজমিনে গিয়ে সেকেন্দার আলমকে বোনের জায়গায় ঘর করে দিতে বলেন। কিন্তু ইউএনও চলে গেলে সেকেন্দার ফের বোনকে নানা ধরনের হুমকি দিতে থাকে এবং মারধর করে।
রেহানা আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমি আদালতের দারস্থ হই।
The Daily surjodoy
আদালত ওই জমির বিষয়টি মীমাংস হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওদিকে আমার ভাই সেকেন্দারও আদালতের মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারি করায়। পরে ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি আদালত আমার পক্ষে রায় দেয়। একই দিনে আমার ভাইয়ের ১৪৪ ধারা খারিজ হয়ে যায়। আমি রাজমিস্ত্রী এনে কয়েকবার ওই জমিতে কাজ করানোর চেষ্টা করি কিন্তু আমার ভাই জোর দেখিয়ে খুন, গুম, উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে আসছে।’
The Daily surjodoy
রেহানা আরও বলেন, ‘পরে আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. ওয়াহিদুজ্জামান, পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সরেজমিনে এসে কাগজপত্র দেখে আমাকে ঘর তুলতে বলেন, তারপরও আমাকে ঘর তুলতে দিচ্ছে না। এই অবস্থায় আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
ওই সংবাদ সম্মেলনে রেহেনা আলমের বাবা মোসলেম উদ্দিন শেখ, মা রোকেয়া বেগম, আরেক বোন রজিনা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
The Daily surjodoy
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেহানা আলম বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে, আইনের মাধ্যমে আমরা দুই বোন এখন আমাদের জায়গায় ঘর তুলছি। কাজ চলছে।’
পুরো জমি বুঝে পেয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো কিছু জমি আছে। আমিন ডেকে সেটা ঠিক করার কথা আছে।’
সেকেন্দার আলমের কাছ পাওনা টাকা ফেরত দিয়েছে কিনা? জানতে চাইলে রেহানা বলেন, ‘আমার ভাই এখন অসুস্থ। এসব নিয়ে আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
The Daily surjodoy
জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী বলেন, ‘আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রশাসনের কিছু করার থাকলে করা হবে।’