শেখরচন্দ্র সরকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
Facebook Twitter Instagram share
আহমেদ আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ও সমন্বয়কারী, সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, বাংলাদেশ।
গণমাধ্যম যদি রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ভ হয়ে থাকে তবে রাষ্ট্রীয় দপ্তর মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে সাংবাদিক রোজিনা নির্যাতন ঘটনার দায় রাষ্ট্র কোনক্রমেই এড়াতে পারেনা। খোদ সরকারের কর্মকর্তা -কর্মচারীদের হাতে একজন গণমাধ্যম কর্মীকে নগ্ন নির্যাতন চিত্র গোটা জাতিকে যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলছে।
Surjodoy.com
এছাড়া নির্যাতন পরবর্তী মামলা, কারাগার এবং জামিন ইস্যুতে সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যেভাবে রোজিনাকে মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে নির্যাতন এবং তৎপরবর্তী পুলিশি এ্যাকশন যা সবকিছুই সিসি ও ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে। ঐ দিন রাতেই তাকে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনের (১৯২৩ সালের) ধারায় তাকে গ্রেুপ্তার দেখানো হয়। পুলিশ তাকে মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ে যাবার প্রাক্কালে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিচ্ছেন এরুপ কথাই কিন্তু সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন।
The Daily surjodoy
কিন্তু তাকে কোনরুপ চিকিৎসা ছাড়াই পরদিন আদালতে পাঠিয়ে দেন, যা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। আদালত তাকে জামিন নামঞ্জুর করে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে শুণানীর জন্য ২০ মে তারিখ ধার্য্য করেন। রোজিনার একটি শিশুকন্যা মাকে কাছে না পেয়ে অঝোরে কাঁদছে। শিশুটি জানেনা তার মা কোথায় আছেন!
The Daily surjodoy
এদিকে রোজিনা গ্রেুপ্তারের পর সারাদেশের সাংবাদিকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া-প্রতিবাদ শুরু হয়। নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে ফুঁসে ওঠে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। কিন্তু এর মাঝে সরকারের লুকিয়ে থাকা সরকার বিরোধীচক্র সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং সাংবাদিকদের কাছে সরকারের দূরত্ব তৈরিতে নানামূখী কুটকৌশল আঁকে।
The Daily surjodoy
ইতিমধ্যে সরকারকে ভুল বুঝিয়ে রোজিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় প্রথম দুটি পর্যায়ে জামিনে বিরোধীতা করে আগামি রোববার ২৩ মে জামিন আদেশের জন্য ধার্য করেছেন আদালত। ঐ দিন রোজিনার জামিন হবে কিনা তা অনিশ্চিত। তবে এখন যারা রোজিনার জন্য আন্দোলন করেন তাদের অনেকেই এখন আর জামিন কিংবা মুক্তির জন্য আন্দোলন করেন না। তারা আন্দোলন করেন রোজিনার কারাভোগের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের মুক্তির জন্য।
The Daily surjodoy
কেননা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে স্পর্শকাতর, গুরুত্বপূর্ণ, রাষ্ট্রীয় গোপণ নথি চুরির অভিযোগে রোজিনাকে ফাঁসাতে চাচ্ছেন তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই চুরিকৃত নথিটি কত নাম্বার কক্ষে এবং কোন ফাইল কেবিনেটে, কার সংরক্ষনে রাখা ছিলো? কেউ কি বলতে পারবেন? জানিতো পারবেন না! কেন পারবেন না? আপনারা সরকারের মাঝে লুকিয়ে থেকে রাষ্ট্রের সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছেন।
The Daily surjodoy
এতবড় গুরুত্বপূর্ণ নথি কোনক্রমেই বাইরে থাকার কথা নহে। যেহেতু বাইরে ছিলনা তবে অবশ্যই কোন ফাইল কেবিনেট কিংবা আলমীরা ভেঙ্গে তাকে ফাইলের কাগজ নিতে হয়েছে। দ্বিতীয় প্রশ্ন: রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাহাড়াদার আপনারা তখন কোথায় ছিলেন? সাংবাদিকদের পক্ষ হয়ে ওই সকল রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের কেউ কি এমন প্রশ্ন করবেন? জানি না কেউ করবেন কিনা!
The Daily surjodoy
তবে রোজিনার ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সাংবাদিকদের মাঝে ঐক্য কত বেশি প্রয়োজন। এরুপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের নেতৃত্বকে আমরা দায়ী করতে চাই। সাংবাদিকদের নেতৃত্ব কাঁধে নিয়ে কে ক’দিন গোটা দেশের সাংবাদিক সমাজের কথা বলেছেন? ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের
The Daily surjodoy
সাংবাদিকদের সবসময় আমরা আলাদা চোখে দেখে আসছি। প্রশ্ন: কেন? মনে রাখতে হবে; খোদ ঢাকা কিন্তু একটি জেলা- বাইরে ৬৩ জেলা। আমরা কখনো কি ৬৩জেলার সাংবাদিকদের হয়ে কথা বলছি? উত্তরে জবাব শতভাগ না! রোজিনা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আপনার ঢাকা জেলায়। দেখুনতো ৬৩ জেলার সাংবাদিকরা কিভাবে ফুঁসে উঠেছে? আপনাদের দৌড়াত্ম পাবলিক জেনে গেছে। গণমাধ্যমের সাথে গণমানুষের দূরত্ব বেড়ে গেছে। তাই চামচিকায়ও সাংবাদিকদের খোটা দিতে ইতস্ত করেনা।
The Daily surjodoy
রাজধানীতে শুধু রোজিনা নির্যাতন নয়। বড়বড় সাংবাদিক সংগঠনের পদধারী নেতারাও নির্যাতন, হামলার শিকার হয়েছিলেন। এমনকি খোদ মিডিয়ার হাউজে সন্ত্রাসী দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তখন কিন্তু ঢাকার বাইরের মফস্বলের সাংবাদিকরাই ফুঁসে উঠেছিলো। কিন্তু আপনারা মফস্বলের গণমাধ্যম কর্মীদের সাংবাদিক হিসেবে মূল্যায়ন করতেই চান না। তাদের বিপদে ঢাকার সাংবাদিকরা টু শব্দটিও করেন না। কিন্তু ৬৩ জেলাই হচ্ছে গণমাধ্যমের প্রাণ। মূল চালিকা শক্তি। এদেরকে মূল্যায়ন করতে শিখুন।
The Daily surjodoy
সবশেষ প্রমান হিসেবে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদানের কথা ধরা যাক। কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদান বন্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে জেলা- কোটা নির্ধারণের দাবি তোলা হয়েছিলো। কিন্তু সেই হিসেবটিতে দেখা যাবে ৬৩ জেলাকে ঠকিয়ে প্রায় অর্ধেক টাকা আপনারা একটি জেলাই হস্তগত করেছেন।
The Daily surjodoy
সবশেষ : সাংবাদিক রোজিনা নির্যাতন ইস্যুটিকে রাষ্ট্রের ঘাড় থেকে মুক্তি দিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত খুব বেশি জরুরী। পাশাপাশি ওই হামলা-মামলা ঘটনার সাথে জড়িতদের সম্পদের খোঁজ নিতে দুর্ণীতি দমন কমিশন-দুদকের প্রতি আহবান থাকবে। রোজিনা ইস্যুই হোক বাংলাদেশেরর সবশেষ ইস্যু। এভাবে আর যেন কোন সাংবাদিক মিথ্যা মামলা-হামলার শিকার না হন। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়নসহ ১৪ দফা দাবি বাস্তবায়নে আপনিও ঐক্যবদ্ধ হোন। সাংবাদিক নির্যাতনকে না বলুন।
Leave a Reply