সর্বনাশী তিস্তার ভাঙ্গনে অসহায় মানুষ !
রেখা মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে রাক্ষুসী তিস্তা নদীর আগ্রাসী ভাঙ্গনে দুইটি ইউনিয়নের কয়েকশত একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বসত ভিটে হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন অনেক পরিবার। হুমকীর মুখে পরেছে সর্বাধিক বসতবাড়ি,হাটবাজার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মন্দির সহ আরো শতশত একর ফসলী জমি।
সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি,তৈয়বখাঁ,চতুরা,কালিরহাট এবং ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ,চরখিতাবখাঁ,গতিয়াশাম,
গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভাঁঙ্গন কবলিত এলাকার ২০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন। রামহরি গ্রামে দেখা যায়,মাঝ নদী থেকে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে পাইপের সাহায্যে বালু উত্তোলন পূর্বক জিও টিউব ভর্তির কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে তীব্র নদী ভাঙ্গনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের সহ সর্বাধিক বসতভিটা সহ তৈয়বখাঁ বাজার,কালিরহাট বাজার,বুড়িরহাট বাজার,সরিষাবাড়ি বাজার,তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কালিরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়,খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি ইউনিয়নের ৪টি মসজিদ,২টি মন্দির,স্থাপনা ও শতশত একর ফসলি জমি হুমকীর সম্মূখীন হয়ে পরেছে।
এভাবে যুগযুগ ধরে তিস্তা নদী ভাঁঙ্গনে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। বিগত দুই যুগে রাক্ষুসে তিস্তা কেড়ে নিয়েছে উপজেলার বিদ্যানন্দ,ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ও নাজিমখাঁন ইউনিয়নের চার হাজারেরও বেশী পরিবারের বসত ভিটা ও ফসলী জমি। সর্বশান্ত এসব পরিবারের অনেকেই আজ পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে তিস্তা পাড়ের সর্বহারা মানুষ গুলোর নানা কষ্টে দিন কাটছে ।
রামহরি গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন,“হামার এই রামহরি মৌজাটা ভাঁংতে ভাঁংতে নদী কাছোত চলি আসছে,সরকার ভাঁঙ্গন প্রতিরোধ না করলে একদিন এই গ্রামো থাকপার নয়”।
খিতবখাঁ গ্রামের সালেহা বেগম জানান,“ মোর বাড়ি এইবার ভ্যাঁই তিস্তা নদী তিনবার ভাঁঙ্গি নিয়া গ্যালো,এ্যাই ভিটাবাড়ি গেইলে আর যাওয়ার কোন জায়গা নাই”।
খিতাবখাঁ গ্রামের মামুন মন্ডল বলেন,“আমরা কোন ত্রান চাই না,নদী খনন সহ ভাঁঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী সরকারের কাছে”।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, নদী ভাঁঙ্গনে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্রই বদলে গেছে,গত দুই যুগে এই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেকাংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বলেন,ভাঁঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোতে আমরা জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ হিসেবে জিও ব্যাগের পাশাপাশি জিও টিউব দিয়েছি। ভাঁঙ্গন প্রতিরোধে কাজ চলছে।
Leave a Reply