করোনা পরিস্থিতির মাঝে প্রায় আড়াই মাস আগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমে ২০০ শয্যার নতুন করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সপ্তাহের মধ্যেই নতুন ওই ইউনিটে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। অথচ আড়াই মাস পরও আলোর মুখ দেখেনি সেই ২০০ শয্যার করোনা ইউনিট।
আর যিনি সেই সুসংবাদ দিয়েছিলেন, সোমবার (০৫ জুলাই) তিনিই দিলেন নতুন দুঃসংবাদ। নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে বললেন, ওসমানীর বহির্বিভাগে (নতুন ভবনে) যে আলাদা করোনা ইউনিট হওয়ার কথা ছিল, তা আপাতত হচ্ছে না।
এদিকে সিলেটে দিনদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে রেকর্ড আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় শনাক্ত হয়েছেন ২৫৩ জন। আর ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল প্রথম করোনা শনাক্ত হয় সিলেটে। এরপর যতই সময় যাচ্ছে ততই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসা সেবায় বেড সংখ্যা বাড়েনি। এমন বাস্তবতায় হয়তো করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অচিরেই বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে সিলেটবাসীকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বিভাগীয় কার্যালয় সিলেট সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসের জন্য একমাত্র ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এখানে ১৬টি আইসিইউ বেডসহ ১০০টি বেড রয়েছে। এছাড়া ৩১ শয্যার খাদিম শাহপরান হাসপাতালে ৩১, দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ১০০, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ১০০ এবং রাজনগরে রয়েছে ৩০ হাসপাতাল।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বিভাগীয় কার্যালয় সিলেট সূত্র জানায়- সিলেট বিভাগে সব মিলিয়ে ৪৪৭টি সরকারি বেড রয়েছে। এরমধ্যে আইসিইউ আছে মাত্র ২৪টি। তবে সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪২৪ জন ভর্তি আছেন।
এদিকে, দিন যতই যাচ্ছে ততই হাসপাতালগুলোতে ভিড় বাড়ছে। সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে সোমবার (৫ জুলাই) দুপুর একটা পর্যন্ত ৯৮ জন ভর্তি ছিলেন।
একই অবস্থা সিলেটের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও। নগরের সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালের করোনা ইউনিটগুলোও রোগীতে পরিপূর্ণ। এছাড়া বেশিরভাগ হাসপাতালেই খালি নেই আইসিইউ বেড। এ অবস্থায় মাসদুয়েক আগে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা করোনা ইউনিট স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হলেও অর্থাভাবে তা থমকে আছে।
করোনা পরিস্থিতি যখন ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে তখন ঘুরেফিরে আসছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করোনা ইউনিটের কথা। কিন্তু দীর্ঘদিনে নতুন করোনা ইউনিট স্থাপন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সচেতন মহল। তাঁরা বলছেন, করোনা রোগীদের জন্য অনেক আগেই ওসমানীতে করোনা ইউনিট স্থাপন করা প্রয়োজন ছিল। তবে এখনও সময় আছে দ্রুত এখানে আইসিইউ সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ করোনা ইউনিট স্থাপন করতে হবে।
তবে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলছেন- নতুন ভবনে করোনার ইউনিট স্থাপনের জন্য বেডসহ যাবতীয় সবকিছু কেনা হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ করোনা ইউনিট স্থাপন করতে হলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট চালু করতে হবে। এজন্য বাজেট দরকার। এটি করতে প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো প্রয়োজন। এ বিষয়ে কোন বরাদ্দ না থাকায় এটি খুব দ্রুতই হচ্ছে না।
অপরদিকে আইসিইউর চেয়ে অক্সিজেন বেশি জরুরি বলে মত দিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নূরে আলম শামীমও। বলেছেন- নতুন করোনা ইউনিট স্থাপনে প্রয়োজন সেন্ট্রাল অক্সিজেন। এতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা না থাকায় ওসমানীর বহির্বিভাগে যে আলাদা করোনা আপাতত হচ্ছে না।