ভুরুঙ্গামারীতে পাটের বাম্পার ফলন
আব্দুর রাজ্জাক কাজল ,কুড়িগ্রাম ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রতিনিধি:
সোনালী আঁশ পাটের সুদিন আবার ফিরে এসেছে। পাট চাষে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আগের মতো পাট চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। উপজেলা পাট অধিদপ্তরের সুষ্ঠু তদারকির কারণে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাট কাটা, জাগ দেয়া, ধোয়া ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তাদের যেন দম ফেলানোর সময় নেই। পাটের ফলন ও ভালো দাম পেয়ে চাষিদের মুখে ফুটে উঠেছে স্বপ্ন পূরণের হাসি।
উপজেলা পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এ উপজেলায় ৩শ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এবার সেখানে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ শ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে চলতি পাট মৌসুমে ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়’ ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পাট অধিদপ্তর ২৪০০ জন পাটচাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছে। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে অনেকে কৃষক উচু এলাকায় সঠিক সময়ে জমিতে পাট বীজ বপন করেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পাটের ফলনও ভালো হয়েছে।
এই অঞ্চলের কৃষকরা দেশি, তোষা, মেশতা, রবি-১ ও-৯৮,৯৭, জাতের পাটের আবাদ করেছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ বেশি হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলা দুধকুমার ও কালজানী নদীর চরে বছরের পর বছর অনেক জমি পতিত পড়ে থাকত। এসব পতিত জমিতে বিভিন্ন অসুবিধা থাকায় ভালো কোনো ফসলের চাষ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ওইসব পতিত জমি পাট চাষের উজ্জল সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় পাট চাষে ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় আশায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরাও এবার পাট চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম-গঞ্জে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাট ছড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। নদী-নালা-খাল-বিলে প্রচুর পানি থাকায় পাট জাগ দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। এছাড়া, পাটের ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১২ মণ পাট পেয়েছে পাট চাষিরা।
পাট চাষিরা জানিয়েছেন, প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, সেচ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, পাট কাটা, শুকানোসহ খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় লাভ হবে ৫/৬ গুণ। গত বছর বিঘাপ্রতি ৭/৮ মণ পাট পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার ফলন ভালো হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১০/১২ মণ পাট পাওয়া যাচ্ছে। পাট শুকানোর পর উপজেলা বিভিন্ন হাটে-বাজারে প্রতিমণ পাট ২ হাজার টাকা হতে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অল্প পরিশ্রমে চাষিরা চরের জমিতে পাট চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। পাট ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজারগুলো সরগরম হয়ে উঠেছে।
উপজেলার চরভূরঙ্গামারী ইউনিয়নের কৃষক ইউনুছ আলী ও মিন্টু মিয়া জানান, আমরা এবার ২ বিঘা করে জমিতে পাট চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় বীজ বপনের প্রথম থেকেই পাটগাছগুলো তড় তড় করে বেরে উঠেছিল। তাছাড়াও এবার বন্যার পানি দেরিতে আসায় চরের পাটের আবাদ খুবই ভালো হয়েছে। আঁশের ধরন খুবই ভালো।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা রতন মিয়া বলেন বলেন, উপজেলা পাট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের সঠিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের কারণে পাট চাষে ঝুঁকে পড়ছেন শিক্ষিত বেকার যুবকরাও। গত বছরের তুলনায় কৃষক এবার পাটের ফলন ভালো পেয়েছেন। বাজারে পাটের দামও ভালো।
পাট অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়ে পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আমি চাষিদের যাবতীয় কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছি। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।