ডেস্কঃ
ঝুঁকিতে পড়েছে বুড়িগঙ্গা বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১। ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সেতুর ওপর দিয়ে প্রায় ২৫/২৬ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। যদিও সেতুটি সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুর এক পাশ গতরাতে খুলে দেওয়া হয়েছে, তারপরও ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। সেতু পরিদর্শন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, চালক ও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতেই বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের ধাক্কায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১ (পোস্তগোলা সেতু) এ ফাটল ধরেছে। সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল গতকাল সকালে ব্রিজটি পরিদর্শন করে। তারা বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজের ক্রেনের উচ্চতা অনুযায়ী জাহাজটি অনায়াসেই ব্রিজ পার হয়ে যেতে পারত। কিন্তু ক্রেনটি সোজা করে রাখায় ধাক্কা লাগে। এর দায় বিআইডব্লিউটিএ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এরপর তারা সিদ্ধান্ত দেন ব্রিজের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হবে। অন্য লেনে গাড়ি চলবে। সোমবার পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনার মর্নিং বার্ড উদ্ধারে আসা বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় পোস্তগোলা ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় উপরের অংশে জোরে ধাক্কা লেগে ব্রিজের পিসি গার্ডার সরে গিয়ে রড বের হয়ে গেছে। প্রত্যয়ের মাথার অংশ ঢুকে যায়। এমন খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সড়ক ও জনপথ পরিবহন কর্তৃপক্ষ সড়ক মন্ত্রণালয়কে জানালে গত সোমবার সন্ধ্যার পর ব্রিজে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন খান গতরাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সেতুটির ভেঙে যাওয়া অংশ সংস্কার করে সেতুর এক লেন বন্ধ রেখে অন্য লেন দিয়ে গত রাত থেকেই সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, সেতুর যে অংশ ভেঙে গেছে তাতে সেতুটি বড় আকারে সংস্কার করতে হবে। আমরা সেটা পরবর্তীতে করব। এদিকে ঢাকা-মাওয়া সড়কের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ সড়কের এই সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২৫/২৬ ঘণ্টার যানচলাচল বন্ধ ছিল। যদিও গত রাতে সেতুর একাংশ (এক লেন) খুলে দিলেও ভারী যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে এই সড়কে বিপুল সংখ্যক পণ্যবাহী ট্রাক, কভার্ডভ্যান, লরি চলাচল করে। ফলে পোস্তগোলা সেতুর গুরুত্ব অনেক বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব সেতুটি পুরোপুরি সংস্কার করে দুই পাশ (দুই লেন) খুলে দিতে হবে। না হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ব্যাহত হবে। এদিকে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের চালক ও কমান্ডার দায়ী। বিআইডব্লিউটিএ’র একজন কর্মকর্তা বলছেন, প্রত্যয়ের চালক ছিলেন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এবং কমান্ডার ছিলেন জহির উদ্দিন চৌধুরী। কমান্ডারের নির্দেশে জাহাজ চলে। পোস্তগোলা সেতু ফাটলের দায় কমান্ডারের পাশাপাশি চালকেরও। তাদের অবহেলায় এ দুর্ঘটনা। ডিএমপির ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের সার্জেন্ট মোসলেউদ্দিন জানান, গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরেজমিন জানা গেছে, পোস্তগোলা সেতুর দুই পাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনো যানবাহন আসা-যাওয়া করতে পারেনি। বুড়িগঙ্গা নদীর দুই পাশের বাসিন্দারা পায়ে হেঁটে বা নৌকায় চলাফেরা করছেন। ব্রিজ বন্ধ হওয়ার কারণে হাজার হাজার অফিসগামী, গার্মেন্ট শ্রমিকরা ও সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়েছেন। মানুষের দুর্ভোগ ছিল চরমে। প্রচ- রোদ উপেক্ষা করে পথচারীদের বিভিন্ন মালামাল মাথায় বা শিশুদের কোলে বা কাঁধে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে পার হতে দেখা গেছে। রফিকুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, সেতুটির ফাটলের জন্য একমাত্র দায়ী প্রত্যয় উদ্ধারকারী জাহাজের সব কর্মকর্তা। তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তাদের এই সামান্য অসাবধানতার কারণে আজকে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রচ- রোদের মধ্যে হেঁটে পার হতে হচ্ছে সেতুটি। আমরা চাই আমাদের এই দুর্ভোগ দ্রুত লাঘব করা হোক। পোস্তগোলা ব্রিজে টোল নেওয়া বন্ধ না হওয়ায় কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এই ব্রিজ এক বছর আগে ভাঙা উচিত ছিল। বাবুবাজার ব্রিজ টোল নেওয়া বন্ধ করেছে, অথচ পোস্তগোলা ব্রিজে নিয়মিত টোল নিচ্ছি। দ্রুত পোস্তগোলা ব্রিজে টোল বন্ধ করে যানচলাচল সহজ করা হোক। প্রসঙ্গত, গত সোমবার সকালে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে বুড়িগঙ্গা নদীতে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ রুটের মর্নিং বার্ড লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ৮ নারী, ৩ শিশুসহ ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।