ভূরুঙ্গামারীতে দ্বিতীয় দিনেও সফল গণটিকাদান কর্মসূচী
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত গণটিকাদান কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিনেও, প্রথম দিনের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলাতে রবিবার (৮ আগস্ট) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে গণটিকাদান কর্মসূচী। এদিন উপজেলার চারটি ইউনিয়নে সফলভাবে এই গণটিকাদান কর্মসূচী সম্পন্ন হয়।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি এবং ডোনেট ফর ভূরুঙ্গামারীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, উক্ত গণটিকাদান কর্মসূচী সফলভাবে সম্পন্ন করে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট, বলদিয়া, জয়মনিরহাট ও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নে যথাক্রমে সোনাহাট ইউনিয়ন পরিষদ, বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, জয়মনিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ এবং আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন পরিষদে বুথ স্থাপনের মাধ্যমে, সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত উক্ত গণটিকাদান কর্মসূচী দ্বিতীয় দিনের মতন সফলভাবে সম্পন্ন করে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সরকার ঘোষিত প্রতিটি কেন্দ্রে ৬০০ জনের মধ্যে, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চারটি বুথের প্রতিটিতে প্রায় ৬০০ জন ব্যক্তিকে চীনের তৈরী সিনোফার্মের ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। টিকা গ্রহীতা ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চল বসবাসকারী জনসাধারণ।
টিকাদান কর্মসূচীকে সফল করতে মাঠপর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের সাথে সমন্বয় করে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে কাজ করে ‘ডোনেট ফর ভূরুঙ্গামারী’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় দেড় শতাধিক ভলান্টিয়ার। এছাড়াও কাজ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীবৃন্দ, এনজিও কর্মী, আনসার, গ্রাম পুলিশ, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহের কর্মীবৃন্দ।
এর আগে গত ২৯ জুলাই ১৮ বছরের বেশি বয়সীদেরও করোনার টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। শুরুতে ৫৫ বছর বয়সীদের টিকার জন্য নিবন্ধন করার অনুমোদন দেওয়া হলেও পরে তা কমিয়ে ৪০ বছর করা হয়। তৃতীয় দফায় সেটি কমিয়ে ৩৫ বছর করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চতুর্থ দফায় তা আরও কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়, যা পরবর্তীতে ২৫ বছর করা হয়েছে। সবাইকে টিকার আওতায় আনতে, ধারাবাহিকভাবে বয়সসীমা কমিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ পর্যন্ত করোনার টিকা এসেছে মোট ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার। এর মধ্যে কিছু টিকা এসেছে উপহার হিসেবে, কিছু এসেছে বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে। বাকি টিকা সরকারি উদ্যোগে ক্রয় করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৫ আগস্ট) বিকেলে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, চলতি মাসে আরও ৪৪ লাখ করোনার টিকা দেশে আসবে।
টিকার সবশেষ পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কোভ্যাক্স থেকে ৪৪ লাখ টিকা পাওয়ার পাশাপাশি, ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা আসবে সেপ্টেম্বরের শুরুতে। ৭৪ মিলিয়ন সিনোফার্মের টিকার ১৫ লাখ টিকার টাকা এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। ভারতের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে, তারাও তাদের কথা রাখবে বলে আশ্বাস দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত শুক্রবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গণটিকাদান কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারা বলেন, দেশের ৪ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন, পৌরসভাগুলোর ১ হাজার ৫৪টি ওয়ার্ড এবং ১২টি সিটি করপোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে গণটিকা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ছাড়া আলাদা ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদেরকেও টিকা দেওয়া হবে। ৬ দিনে ৩২ লাখের মতো মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
উল্লেখ্য যে, গণটিকাদান কর্মসূচীর প্রথম দিনে গত শনিবার (৭ আগস্ট) বাংলাদেশে রেকর্ড ২৭ লাখেরও বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ এবং ৫৩৭৯৮ জন মানুষ টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।