জুয়েল খাঁন,সিলেট জেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে ফাঁদে ফেলে নিয়ে যান কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রমোদভ্রমণে। তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে মানিক এ অপকর্ম করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজি বরাবর এ অভিযোগ করেছেন হবিগঞ্জের ওই ব্যবসায়ী।
হবিগঞ্জ জেলা ডিবির সাবেক ওসি ও বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলায় কর্মরত ডিবির ওসি মানিকের বিরুদ্ধে ২০ মার্চ সিলেটে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন ওসমানীনগরের এক তরুণী। ২০ জুন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র জেলা জজ
মুহিতুল হক এনাম চৌধুরীর আদালতে মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ওসমানীনগর উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, হবিগঞ্জে কর্মরত থাকাকালীন অভিযুক্ত মানিক ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর কদমতলা এলাকায় বডি ম্যাসেজ করতে তাহলিল ফিজিওথেরাপি সেন্টারে প্রায়ই যেতেন।
সেখানে পরিচয় হয় ফিজিওথেরাপিস্টের সহকারী এক তরুণীর সঙ্গে। মানিক ওই তরুণীকে বিভিন্ন সময় অসামাজিক কাজের প্রস্তাব দিতেন। ওই তরুণী বিষয়টি ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরিচালককে জানান।
এরপর থেকে মানিক তরুণীর প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বিরক্ত করাসহ অশোভন ইঙ্গিত, অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে জীবন দুর্বিষহ করে তোলেন। এ বছরের ১৫ জানুয়ারি রাত ৯টায় পরিকল্পিতভাবে থেরাপি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন মানিক। তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
তরুণী চিৎকার করলে মানিক তরুণীকে চড়-থাপ্পর মেরে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে ওই ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরিচালক তার নিজ দায়িত্বে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেবেন মর্মে আশ্বস্ত করেন ওই তরুণীকে।
কিন্তু ওসি মানিক তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে সালিশ না মেনে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। অবশেষে ওই তরুণী থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ তার মামলা নেয়নি। পরে তিনি বাদী হয়ে সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আদালত থেকে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসমানীনগর উপজেলা আনসার ও ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমা বেগম জানান, তিনি বিলম্বে কাগজপত্র পাওয়ায় আদালতে এক মাস সময় চেয়েছেন। ইতোমধ্যে অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। অভিযুক্তের বক্তব্য নেওয়া বাকি রয়েছে।
তদন্তকাজ শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও ওই তরুণী এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে পুলিশের আইজিপি ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও সিরাজগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার। ১৭ জুলাই তরুণীর বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল তদন্ত করতে সিলেটে আসে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ভুক্তভোগী তরুণীর সাক্ষ্য-প্রমাণাদি গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্যাতনের শিকার তরুণী। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারকে ফোন করা হলে তিনি তার বাবা গুরুতর অসুস্থ থাকায় কোনো কথা বলতে চাননি।
২০২০ সালের ২০ আগস্ট ডিবির ওসি মানিকের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার এক ব্যবসায়ী তার স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ও তার কাছে চাঁদা দাবি এবং হত্যার হুমকি প্রদানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজিসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন।