রফিকুল ইসলাম বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের ২য় স্থল বন্দর বেনাপোল ও প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বেনাপোলে গড়ে ওঠেনি একটি সরকারি বা বেসরকারি কোন হাসপাতাল। কাগজ কলমে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও তার নেই কোন অস্তিত্ব। এ অঞ্চলের মানুষ পাচ্ছে না কোন চিকিৎসা সেবা।
চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত পাসপোর্টযাত্রী, বন্দর ব্যবহারকারী ও এলাকাবাসী। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ১ লাখ ২ হাজার পৌর নাগরিক। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে কাস্টমস ও বন্দরে কর্মরত ১০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী। বন্দর ও পৌর এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা।
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও এখানে নেই একটি সরকারি বা বেসরকারি কোন হাসপাতাল। ভারতের সাথে এ বন্দর দিয়ে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যিক আয় করে থাকেন সরকার। বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে থাকে ভারতে। বেনাপোলে আছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি অসংখ্য ব্যাংক বীমা অফিস।
বন্দর ও পৌর এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। উপজেলা পর্যায়ে একটি মাত্র ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে. এখান থেকে ১২ কিলোঃ দূরত্বে নাভারনে। এখানে বড় ধরনের মূমূর্ষ কোন রোগী আসলে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হন কর্মরত চিকিৎসকরা।তখন বাধ্য হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৩৮ কিঃ মিঃ দূরে রোগী অভিভাবকদের যশোর জেলা শহরে সদর হাসপাতাল সহ অন্যান্য ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। প্রাথমিক ভাবে জরুরী সেবা নিতে না পেরে অনেক সময় বেনাপোলের বাইরে হাসপাতালে যেতে যেতে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। গত ৬ মাসে এ এলাকায় ৭৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২জন নিহত ও আহত হয়েছে ৯১জন। এই বন্দরে হাসপাতালের অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে চিকিৎসা না পেয়ে অসহায় মৃত্যু বরন করছে। বেনাপোল বাসীর দীর্ঘ দিনের প্রানের দাবী অবিলম্বে বেনাপোল বন্দর এলাকায় সরকারি ভাবে একটি উন্নত মানের হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক।
বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক রাজু আহম্মেদ বলেন, বন্দর নাকি শ্রমিকের প্রাণ। তাহলে শ্রমিক আঘাত পেলে কোথায় যাবে. বন্দরে একটি হাসপাতাল, একটি এ্যাম্বুলেন্স এর কথা বন্দর পরিচালককে একাধিকবার বলা হয়েছে। বন্দরের শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের স্বার্থে এখানে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন বলেন, বেনাপোল বন্দর এলাকায় একটি হাসপাতাল খুবই জরুরি। আমাদের ট্রাকের অনেক চালক দুর্ঘটনায় পতিত হলে ফায়ার সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্সে করে যশোর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। পথে অনেকে মারাও গেছেন। এখানে হাসপাতাল হলে বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিটি সংগঠনসহ এলাকাবাসী তাদের সেবার জায়গাটা খুঁজে পাবে। সরকারের কাছে দাবি এখানে দ্রুত একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক।
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, দেশের গুরুত্বপুর্ণ স্থলবন্দর বেনাপোল. কিন্তু দুঃখজনক যে এখানে একটি হাসপাতাল নেই। দেশের অনেক উপজেলা ও শহর থেকে বেনাপোলের মত দেশের একটি বৃহৎ বন্দর, কাস্টমস হাউজ, থানা, পৌরসভার মত স্থাপনা থাকার পরও এখানে কোন হাসপাতাল নেই। আমরা সরকারের কাছে এখানে ৫০ শষ্যার একটি হাসপাতাল দ্রুত নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি।
যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন বলেন, বেনাপোল স্থল বন্দরে শুধুমাত্র করোনার জন্য পাসপোর্টযাত্রী ও ট্রাক ডাইভারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেনাপোলে যদি বড় আকারে একটি হাসপাতাল করা হয় তাহলে বন্দর ব্যবহারকারীসহ এ অঞ্চলের সকল মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। আমরা উচ্চ পর্যায়ে পত্র দিয়েছি বেনাপোলে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করার জন্য। আশা করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে একটি হাসপাতাল নির্মানে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..