২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সিলেটে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। গত প্রায় দেড় বছর এ পরিস্থিতি সিলেটসহ সারাদেশে নগরজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সিলেট সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) সিসিক’র বাজেট ঘোষণার সময় বিষয়টি তুলে ধরেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই ২টি জেট স্যাকার গাড়ী ও পানির ট্যাংকি, মটরপাম্পসহ স্প্রেগান সংযুক্তির মাধ্যমে ৪টি পিকআপ ভ্যানের সাহায্যে জীবানুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। নগরের কাঁচাবাজারে প্রতিনিয়ত তরলকৃত ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করা হয়েছে।’
সিসিকের পক্ষ থেকে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা ইউনিটের জন্য একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য ৪টি বেসিন ও পরিবহনের জন্য ১টি মাইক্রোবাস প্রদান করেছে সিসিক।
এছাড়াও হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে হেপাফিল্টার স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
করোনা পরিস্থিতিতে সিসিকের উদ্যোগের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নতুন করোনা ইউনিট চালুর লক্ষ্যে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ। বিষয়টি উল্লেখ করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ওসমানী হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে প্রস্তাবিত করোনা ইউনিটে যাতে দ্রুত সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপন এবং অক্সিজেন সংকট ও আইসিইউ বেড সংকট মোকাবেলায় আশু করণীয় বিষয়ে আমরা সবার সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের কাছ থেকে গৃহিত পরামর্শ ও প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রেরণ করেছি।’
জনগুরুত্ব বিবেচনায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের লক্ষ্যে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
এছাড়াও করোনা মহামারীতে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির মরদেহ গোসল করানো, দাফন এবং সৎকারে সিলেট সিটি করপোরেশন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করেছে বলে জানান তিনি।
মেয়র আরও বলেন, ‘কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ওয়ার্ডের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগের জন্য ফিনাইল ও ব্লিচিং পাউডার বিতরণ করা হয়েছে। বস্তিবাসী ও হতদরিদ্র লোক ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, ড্রাইভার, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যে মাস্ক ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।’
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সীমিত জনবল আর নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রত্যেক কর্মী যেভাবে ঝুঁকি উপেক্ষা করে করোনা মোকাবেলায় নিজেদের সর্বোচ্চ উজাড় করে কাজ করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন সেজন্য আমি তাদের জন্য গর্ব অনুভব করি। বিশেষ করে এবার করোনার টিকাদান কর্মসূচিতে প্রচণ্ড ধৈর্য্য ধারণ করে কাজ করছেন। এ জন্য আমি আশান্বিত।’
এছাড়া ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এডিস মশার লার্ভা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, যা চলমান আছে।
সিসিক মেয়র বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘গত অর্থবছরে করোনাকালে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের সাহায্যে সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য প্রায় ৭৭ হাজার ১শ ৫০ পরিবারকে দিতে পেরেছি। এবারও কঠোর লকডাউন চলাকালে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে মহানগরের ২৭ ওয়ার্ডে মোট ২২ হাজার অসহায় পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ফান্ডের পাশাপাশি এই মানবিক কার্যক্রমে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ ৬০ লাখ টাকা এবং ১শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’