কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে নদনদীর পানি। ব্রহ্মপূত্র ও ধরলা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চর ও নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হওয়ায় ঘরে ফিরতে পারছে না বানভাসীরা। টানা ৬দিন ধরে বন্যার পানি অবস্থান করায় দুর্ভোগে পরেছে বানভাসীরা। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট। চাহিদার তুলনায় সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় বানভাসীদের মধ্যে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।
শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ধরলা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় ৩টি পৌরসভাসহ ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৫৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়েছে ৬২ হাজার ৪শ’ মানুষ। ভাঙনে বিলিন হয়েছে ২ হাজার পরিবার। ক্ষতি হয়েছে ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমির ফসল। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ১শ’টি। বাঁধ ৩০ কিমি ও রাস্তা ৩৭ কিমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে বন্যার ফলে কর্মহীন হয়ে পরেছে কর্মজীবী শ্রমিকরা। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীরা রয়েছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে। একদিকে কাজ নেই অপরদিকে ত্রাণের স্বল্পতা। জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে ৩হাজার পানিবন্দী মানুষের মধ্যে মাত্র ত্রাণ পেয়েচে মাত্র ৬শতাধিক পরিবার। ২৪শ’ পরিবারের কাছে পৌঁছেনি ত্রাণ।
ওই এলাকার নীলকণ্ঠ গ্রামের ছামসুল (৪৫) জানান, দিনমজুরি করি খাই। ৬দিন থাকি পানিবন্দী। কাঁইয়োতো খোঁজ করিল না। এ্যালা কি খায়া বাঁচি।
একই এলাকার উমর ফারুক (৪২) জানান, মাটি কাটা, বালু তোলার কাজ করং। বান আসি কাম কমি গেইল। ঘরোত যা আছে তাকে দিয়া টানাটানি করি চলছে। পরে যে কি হইবে আল্লায় জানে।
বাবুরচর গ্রামের শামসুল জানান, বাবারে কামাই নাই। ছওয়াগুলা বুঝবের চায় না। ওমরাগুলা ভালমন্দ খাওয়ার জন্য কান্দাকাটি করে।
কলাতিপাড়ার মনোয়ারা (৪০) জানান, হামরাগুলা ত্রাণ পাই নাই। মুই বিধবা বেটিছওয়া। বেটাক নিয়া থাকং। দুপুর হয়া গেইল। এলাও চুলাত আগুন জ¦লে নাই। হামাকগুলাক কাঁইয়ো দেখে না।
এমন নানান অভিযোগ আর অনুযোগ রয়েছে বন্যার্তদের মাঝে। জনপ্রতিনিধিদের সীমাবদ্ধতা থাকায় সবার কাছে পৌঁছতে পারছেন না। ফলে তারাও রয়েছেন প্রচন্ড চাপে।
উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মাস্টার জানান, ভাই বাড়িত ঘুমাইতে পারি না। ভোর রাত থেকে মাঝরাত পর্যন্ত মানুষ বাড়ি ঘিরে রাখে। এছাড়াও মাঝরাতে কেউ বিপদে পরলে তাকে উদ্ধার করার জন্য নৌকা পাঠাতে হয়। এমন দুর্ভোগের মধ্যে কাটছে আমাদের দিন। এবার সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলেও, বেসরকারিভাবে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি। এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর পাশে কলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, জেলার দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য ৯ উপজেলায় ৩০২ মে.টন চাল ও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যা বিতরণ পর্যায়ে রয়েছে।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..