তুষার কান্তি সাহার পাসপোর্ট অনুযায়ী তিনি ভারতীয় নাগরিক। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে চাকরি করছেন তিনি। ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এরপর থেকে এ নিয়ে সিলেটসহ সারাদেশে তোলপাড় হচ্ছে।
আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও একসঙ্গে সিলেটের ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকের (পিডি) দায়িত্ব একাই পালন করছেন তুষার কান্তি সাহা। নিয়ম অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের একটি প্রকল্পে একজন পিডি থাকতে পারবেন।
সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন, এক ব্যক্তিকে যেনো একাধিক প্রকল্পের পরিচালক করা না হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনা এবং সব আইন অমান্য করে একাই ছয়টি প্রকল্পের পরিচালকের (পিডি) দায়িত্ব পালন করছেন তুষার কান্তি। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।
প্রকল্পগুলো হলো- সিলেট বিমানবন্দর বাইপাস ইন্টারসেকশন-লালবাগ-সালুটিকর-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কের জাতীয় মহাসড়ক উন্নতকরণ প্রকল্প (ব্যয় ৬২৭ কোটি), সিলেট জোনের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ত উন্নীতকরণ প্রকল্প (ব্যয় ৫৬০ কোটি), সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক টু শাহ পরাণ সেতু ঘাট সড়ক চার লেনে মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (ব্যয় ২৩৫ কোটি)। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (ব্যয় ১১৬ কোটি টাকা),
এছাড়া ঢাকা-সিলেট-তামাবিল-জাফলং জাতীয় মহাসড়কের জৈন্তা থেকে জাফলং পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পেরও পিডি তুষার কান্তি। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৯০ কোটি টাকা।৫৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিলেট জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ত উন্নীতকরণ প্রকল্পেরও পরিচালক তিনি।
এদিকে তুষার কান্তি সাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল সংসদীয় কমিটি। সচিব আর একজন যুগ্ম সচিবকে দিয়ে তদন্ত করেছেন। সেই তদন্তে তুষার কান্তি সাহাকে দোষীও করা হয়নি, আবার ছাড়ও দেওয়া হয়নি।
দায়সারাভাবে তদন্ত হওয়ায় প্রতিবেদনটি আমলে নেয়নি সংসদীয় কমিটি। এজন্য ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সচিবকে দিয়ে নতুন করে তদন্ত করাতে বলা হয়েছে। সচিব না পারলে অন্তত অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার কাউকে দিয়ে তদন্ত করার কথা বলেছে কমিটি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন বলেন, অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করে বলা যাবে। কীভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা অবৈধ পাসপোর্ট নিয়ে অন্য দেশে বসবাস করেন, এসব বিষয়ে তদন্ত করে বলা যাবে। আমরা সঠিক তথ্য জানতেই আবারও তদন্তের কথা বলেছি।
এর আগে, ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে সিলেট বিভাগের ৫৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় তিনি যখন তার প্রকল্পের অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরছিলেন তখন পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, আপনি একজন ছয়টি প্রকল্পের পিডি হলেন কীভাবে?
জবাবে তুষার কান্তি সাহা বলেন, এভাবেই তো চলে আসছে। আমি প্রকল্পগুলোর দায়িত্ব পালন করছি। উপর থেকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানলে এটা করা যাবে না।
১৯৮৯ সালের ১৬ মে ঢাকায় সওজের স্ট্রাকচার ডিজাইন বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি শুরু করেন তুষার কান্তি। ১৯৯২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে সওজ সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, কোনো বিদেশি পাসপোর্টধারী বা নাগরিক তথ্য গোপন করে দেশে চাকরি করলে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এসব বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহার সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।