হাজী মোক্তার হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কর্মহীন জেলেদের খাদ্য সংকট চরমে
পুরো মৌসুমে মাছের আকালের পর মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন জেলেদের সংকট বাড়ছেই। এসব জেলের জন্য সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণেও গড়িমসি করছে জনপ্রতিনিধিরা। আবার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। তবে সংকটে থাকা জেলেদের দ্রুত খাদ্য সহায়তার আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
জানা গেছে, চরফ্যাসনের মেঘনাপাড়ের মিয়াজানপুর গ্রামের সহোদর জেলে হাসান ও হাফিজের আয়ে চলে পরিবারের ১২ সদস্যের সংসার। গত ৪ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার পর তাদের আয়ের পথ বন্ধ। পেটের দায়ে বুধবার (৬ অক্টোবর) রাতে নদীতে ইলিশ ধরতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে আটক হন হাসান, হাফিজসহ ৬ জন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের প্রত্যেকের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। জরিমানার ১০ হাজার টাকা ধার করে পরিশোধ করে ২ ভাই ফিরে এলেও এখন ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায়।
ঘরে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে নদীতে গিয়ে হাসানদের সঙ্গে আটক হন একই গ্রামের মো. জামাল। একই এলাকায় পুরান সামরাজ ঘাট থেকে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করা হয় মোতাহারসহ ৬ জনকে। টাকার অভাবে শুক্রবার (৮ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত তাদের ছাড়িয়ে আনতে পারেনি পরিবার।
জরিমানা দিয়ে ফেরত জেলেরা জানান, পেটে দায়ে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে জরিমানা দিতে হলো ৫ হাজার টাকা। অথচ আমাদের জন্য প্রণোদনা না দিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আমরা তো গরিব মানুষ, মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। একদিন মাছ ধরতে না পারলে সংসার চলে না। পরিবার নিয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন পার করতে হয়। ম্যাজিস্ট্রেটকে বারবার অনুরোধ করেও মাফ করেনি। এর মধ্যে মাথা চেপেছে ঋণের বোঝা। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞায় নদীতে নামতে পারছেন না জেলেরা। আবার ইউনিয়ন পরিষদের গড়িমসিতে পাচ্ছেন না সরকারি খাদ্য সহায়তাও।
জেলে হাবিব মিয়া জানান, নদীতে যেতে পারছি না। তাই এখন অভাবের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। কোনো বাজার-সদাই করতে পারছি না। সরকারি কোনো সহায়তাও পায়নি। এখন সরকারি সহায়তার দাবি জানাচ্ছি।
এ অবস্থায় কর্মহীন জেলেদের মধ্যে সরকারি সহায়তা দ্রুত বিতরণের দাবি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজির।
তবে সংকটে থাকা জেলেদের খাদ্য সহায়তার আওতায় আনার আশ্বাস দেয় মৎস্য বিভাগ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, জেলেদের জন্য ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই চালগুলো ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আশা করছি, এই চাল দু-একদিনের মধ্যে জেলেদের মধ্যে বিতরণ করতে পারব।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় জেলায় প্রথম চার দিনে ৫৪ জনের জেল জরিমানা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ৬৫ হাজার মিটার জাল, ১ টন ইলিশসহ দুটি ট্রলার।