সূর্যোদয় অনলাইন ডেস্ক,
ছাত্রলীগে পদ বিক্রির অভিযোগে বিক্ষোভ
অবশেষে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। মহানগরে কিশওয়ার জাহান সৌরভকে সভাপতি ও মো. নাঈম আহমদকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে জেলায় নাজমুল ইসলাম সভাপতি ও রাহেল সিরাজ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। গত শনিবার রাতে ফেসবুকে মহানগরের যে দুটি কমিটির তালিকা ভাইরাল হয়েছিল, তার একটিতে কিশওয়ার ও নাঈমের নাম ছিল। অবশ্য ছাত্রলীগের প্যাডে প্রকাশিত সে তালিকায় মহানগরের আরও কয়েকটি পদে নেতাদের নাম ছিল। পাশাপাশি এক সপ্তাহের মধ্যে আংশিক কমিটি ঘোষণার কথাও বলা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কমিটিগুলোর অনুমোদন দেন। তবে জেলা কমিটি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। টাকা লেনদেনের মাধ্যমে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়ার অভিযোগে বিকেলে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগের একাংশ। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ফেসবুকে একই অভিযোগ করেন। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় জেলা কমিটির নতুন সাধারণ সম্পাদকের বাসায় হামলারও অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল দুপুরে কমিটি অনুমোদন দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জেলা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে মিছিল বের করা হয়। এই মিছিল থেকে জেলার নতুন সাধারণ সম্পাদক রাহেলের নাম ধরে কটূক্তি করে দেওয়া হয় নানা স্লোগান। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে কমিটির শীর্ষ পদ বিক্রির অভিযোগ করা হয়। গতকাল নগরীর তেলিহাওর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর জিন্দাবাজারে আল-হামরা শপিং সিটির সামনে এলে পুলিশ বাধা দেয়। তবে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। ফলে সিলেট-জিন্দাবাজার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ অবরোধের পর নেতাকর্মীরা রাস্তা ছাড়েন।
সন্ধ্যার পর নগরীর বড়বাজার এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেলের বাসায় হামলার অভিযোগ করেন তার বড় ভাই গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রুমেল সিরাজ। তিনি বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ, মহানগরের সাবেক সহসভাপতি সুজেল আহমদ তালুকদার ও যুবলীগ নেতা দুলাল আহমদের নেতৃত্বে ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে ৩০-৩৫ জন তাদের বাসায় হামলা করেছে। এ সময় তাকে বাইরে পেয়ে সন্ত্রাসীরা হামলার চেষ্টা করলে দৌড়ে বাসায় ঢুকে আত্মরক্ষা করেন তিনি। এরপর হামলাকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে চলে যায়।
রুমেল আরও বলেছেন, চারদিকে মিছিল হওয়ায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ হামলায় জড়িতরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের নগরীর তেলিহাওর গ্রুপের সদস্য। এ ব্যাপারে শাহরিয়ারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সুজেল আহমদ তালুকদার দাবি করেন, শাহরিয়ার, দুলাল বা তিনি কেউ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এ ধরনের কোনো ঘটনা জানেন না দাবি করে তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ কোনো নেতাকর্মী হামলা করে থাকতে পারে। তিনি বলেন, কমিটি ঘোষণার পর সিলেট ছাত্রলীগে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে।
মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার ওসি খান মোহাম্মদ ময়নুল জাকির বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে সিলেট জেলা ও মহানগরে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ছয়জনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান, বিপ্লব কান্তি দাস, মুহিবুর রহমান মুহিব, কনক পাল অরূপ, হোসাইন মোহাম্মদ সাগর ও সঞ্জয় পাশী জয়। তাদের মধ্যে জাওয়াদ ও মুহিবুর রহমান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কেন্দ্রীয় পদ প্রত্যাখ্যান করেন।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা ও ২০১৫ সালের জুলাইয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে কয়েক দফা স্থগিত করার পর ২০১৭ সালের অক্টোবরে জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে নানা অভিযোগে মহানগর কমিটিও বিলুপ্ত হয়। এরপর কয়েক দফা কমিটি করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও গ্রুপিংয়ের কারণে তা হয়নি। গত ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সিলেটে এসে কর্মিসভা করেন। সেদিন ছাত্রলীগের শীর্ষ এ দুই নেতা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিলেটে কমিটি দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়। পদপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগ নেতারাও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত সিলেটে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের পছন্দে উভয় কমিটি হয়েছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। মহানগর ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি কিশওয়ার জাহান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বলয়ের নেতা। মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাঈম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহার অনুসারী। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিত সরকার ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলয়ের নেতা। এ বলয়ের অনুসারী হলেও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ারসহ অনেকে নতুন সম্পাদক রাহেলকে মেনে নেননি।
আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিনের বলয় থেকে রাহেল সিরাজের বদলে জাওয়াদকে জেলার কমিটিতে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। এ প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় বিকেলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কেন্দ্রীয় সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাওয়াদ। এতে তিনি লিখেছেন, ‘রাজনীতিতে যখন অপরাজনীতি শক্তিশালী হয়ে যায়, তখন আমার মতো কর্মীর কাছে প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকে না। প্রিয় সহযোদ্ধারা, দেখা হবে রাজপথে…।’ এর আগে কেন্দ্রীয় পদে রাখায় শীর্ষ ন