ওয়াকিল আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট
বিয়ের পর মাহি…
মুখে তার ভুবন ভুলিয়ে দেওয়া মিষ্টি হাসি। একটু চঞ্চল, একটু দুষ্টুু। যেন মুক্ত বিহঙ্গ। অভিনয়ে সাফল্যের সিঁড়ি ডিঙিয়ে আজ তিনি উজ্জ্বল এক তারকা। তবে মাহির পথচলা এখন তার একার জন্য নয়। সঙ্গে আছেন জীবনসঙ্গী। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ৫ মিনিটে বিয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিয়ের পর নতুন বরকে নিয়ে সংসার, শুটিং সবই সমানতালে করছেন। গুনে গুনে মাহির নতুন সংসারের বয়স ৩২ দিন। প্রথা অনুযায়ী নতুন সঙ্গীকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার কথা। কিন্তু না নতুন বউ, না মধুচন্দ্রিমা।
এসব কিছুই হয়নি মাহির বেলায়। বিয়ের পর তার মধুচন্দ্রিমা হয়েছে পূবাইল, এফডিসি, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে। বিয়ের পরই স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন এফডিসিতে ‘বুবুজান’ ছবির সেটে। শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত ছবির কাজ শেষ করেই শুরু করেন একই পরিচালকের ‘নরসুন্দরী’। ছবিটি নিয়ে মাহিকে ঘুরতে হবে ঢাকা, চাঁদপুর, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জে। মাহির সঙ্গে যখন কথা হয় তখন এ ছবির শুটিংয়ে পূবাইলে অবস্থান করছিলেন তিনি। মাহি বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন শুটিং বন্ধ থাকায় কাজ হয়নি। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আবার যখন কাজ শুরু হলো, সে সময় বিয়েও করলাম। বিয়ের কারণে আমার কাজ আটকে থাকুক, তা চাইনি। তাই কাজের ক্ষেত্রকেই মধুচন্দ্রিমার অংশ বানিয়েছি। তবে মধুচন্দ্রিমায় যে যাব না, তা কিন্তু নয়। কাজটা আগে গুছিয়ে দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’
মাহি তার অভিনয়জীবনে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এবার তাকে দেখা যাবে একজন নরসুন্দরীর চরিত্রে। এই চরিত্রে কোনো গ্ল্যামারের বালাই নেই। মাহি জানালেন, আমি সব সময় চরিত্রে বৈচিত্র্য চেয়েছি। এবারের চরিত্রটি সত্যি অন্যরকম। মেয়ে হয়েও গ্রামের একটা সেলুন চালায়. যেখানে ছেলেরা আসে চুল কাটাতে। তা নিয়ে তৈরি হয় নানা ঝামেলা। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেলুনটি রক্ষা পায়।
সিনেমায় ৯ বছরের ক্যারিয়ারে অভিনয়ের ব্যাপারে মাহির ক্ষেত্রে একটা কথা প্রযোজ্য। সিনেমার ব্যাপারে তিনি হুটহাট সিদ্ধান্ত নেন। ভাবনার ধার ধারেন না। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতেই অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘অনেকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে দিনরাত গল্প-চরিত্র নিয়ে ভাবতে বসেন। কীভাবে চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিজেকে তুলে ধরবেন পর্দায়, তা নিয়ে দিনরাত বৈঠক। এতে হয়তো তাদের কাজের ফল ভালো হয়। আমার বেলায় হয় ঠিক উল্টো। সবসময় দেখেছি, যখনই কোনো কিছু নিয়ে বেশি ভাবি, কাজের সময় তা এলোমেলো হয়ে যায়।
এ জন্য অভিনয়ের সময় আমি নির্মাতার নির্দেশনাকেই গুরুত্ব দিই। অবশ্য কাজ শুরুর আগে মানসিক প্রস্তুতি থাকে পরিচালকের প্রত্যাশা পূরণের।’ তার এ কথায় অনেকে অবাক হতে পারেন এই ভেবে, মাহি কাজের বিষয়ে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তার ঝুলিতে কীভাবে এত আলোচিত ছবি জমা পড়ল! মাহি বলেন, এই একটা বিষয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মানি। ‘অগ্নি’, ‘পোড়ামন’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’, ‘দেশা :দ্য লিডার’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘জান্নাত’ থেকে শুরু করে শেষ চলচ্চিত্র ‘নবাব এলএলবি’ পর্যন্ত আমার অভিনীত যত ছবি দর্শক-প্রশংসা কুড়িয়েছে, তার পেছনে যতটা না নিজের, তার চেয়ে বেশি অবদান নির্মাতাদের। অন্তত আমি এটাই মনে করি। ভালো লাগা এখানেই যে, এসব ছবির জন্য নির্মাতা আমার কথা ভেবেছেন। আমি চেষ্টা করেছি অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণে। এর পরও এটাই সত্যি, অভিনয়ের আগে গল্প ও চরিত্র নিয়ে খুব একটা বাছ-বিচার করিনি।
মাহিয়া মাহি তার অভিনয় ক্যারিয়ারের সাফল্যে সৌভাগ্যকে যতটা বড় করে দেখছেন, সেভাবে হয়তো অনেকে ভাগ্যে বিশ্বাসী নন। কিন্তু বেশ কিছুদিন বিরতির পর যখন তার ক্যারিয়ারের নতুন প্রহর, তখনও দেখা গেল ভাগ্য সুপ্রসন্নই। এ বছরের শুরুটা হয়েছে তার ‘নবাব এলএলবি’ ছবির সাফল্য দিয়ে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই হাতে এসেছে ভিন্ন ধাঁচের গল্পের তিনটি ছবি- ‘গ্যাংস্টার’, ‘লাইভ’, ‘নরসুন্দরী’। তিনটি ছবি নিয়েই আশাবাদের গল্প শোনালেন এ নায়িকা। এখন কথা হলো, নতুন ছবির বাইরে যে কাজ করছিলেন, সেগুলো নিয়ে তার প্রত্যাশা কতটুকু? জবাবে মাহি বলেন, “মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিতে দর্শক নতুন মাহিকে দেখতে পাবেন- এটুকু বলতে পারি। পাশাপাশি ‘আশীর্বাদ’ নিয়েও আমি আশাবাদী। করোনার জন্য যদিও এ ছবি দুটির নির্মাণ কিছু বাধার মুখে পড়েছিল; শেষ পর্যন্ত সবই পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। তাই ভালো কিছুর আশা করতেই পারি।”
কাজ নিয়ে অনেক কথা হলো, এবার নতুন সংসারের গল্প শোনা যাক। প্রসঙ্গ তুলতেই মাহি বললেন, ‘রাকিবকে নিয়ে দারুণ চলছে আমার নতুন সংসার। একটু একটু করে সাজিয়ে তুলছি নিজেদের বাড়ি। মোট কথা, আমরা ভালো আছি, ভালো থাকতে চাই- এটাই স্রষ্টার কাছে চাওয়া।’ তার এ কথায় বোঝা যাচ্ছে, জীবনের নতুন অধ্যায়ে মাহি বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দিন পার করছেন। মাহি বলেন, একটা মানুষ দুপুর ১২টা, কখনও বেলা ২টায় ঘুম থেকে উঠত। আমি পছন্দ করি বলে সে সকাল ৭টায় ঘুম থেকে ওঠে। আমাকেই প্রায়োরিটি দেয়। প্রতিদিন আমাকে ফুল দেয়। এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। খুব মুগ্ধতা নিয়েই সংসার করছি। মাহি যে মুগ্ধতা নিয়ে সংসার শুরু করেছেন, তা টিকে থাক চিরকাল- এমন মন্তব্যের পর মাহিরও একই চাওয়া। নায়িকার বাইরে মাহি বরাবরই একজন রোমান্টিক মানুষ। পছন্দ করেন ঘুরতে, বন্ধুদের সঙ্গে হৈহুল্লোড় করতে, প্রিয়জনের ভালোবাসায় মজে থাকতে। মাহির বয়ানে- ‘জীবন আমার কাছে রংধনুর মতো। বহু রঙের সমষ্টি। জীবন আমি নিজের মতো করেই যাপন করতে চাই।’