সেলিম সম্রাট,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কার্তিক মাসে হঠাৎ যৌবন ফিরে পেল তিস্তা।
শুষ্ক মৌসুমে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল ও ভারতের গজলডোবার সব কয়টি গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি হুহু করে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । ফলে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা।
এদিকে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাট বাইপাস ভেঙ্গে তিস্তার পানি হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী,সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না,পাটিকাপাড়া,ডাউয়াবাড়ী,সানিয়াজান ইউনিয়নে বর্ন্যা দেখা দিয়েছে।
এতে লালমনিরহাটে তিন উপজেলায় তিস্তার চর এলাকায় ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে হাজার হাজার হেক্টর ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে রাস্তাঘাট ভাঙ্গন।
বুধবার (২০ অক্টোবর ) ভোর থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে তিস্তারচর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার দেখা দিয়েছে।
ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার গুলো উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
কার্তিক মাসের শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ এমন বন্যা দেখিনি তিস্তাপারের চরবাসী। গতরাত থেকে বুঝে উঠার আগে ঘরবাড়িতে হু হু করে পানি প্রবেশ করলে আতঙ্ক বিরাজ করে।
বুধবার (২০ অক্টোবর ) সকাল ৯ টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপরে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে জেগে উঠেছিল চর। হঠাৎ তিস্তার পানিতে সব ডুবে গিয়ে তিস্তা ফিরে পেয়েছে নতুন যৌবন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারাজ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। বুধবার সকাল ৯ টায় পয়েন্টে ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তাচরের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার জন্য আহবান জানান।
জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নিম্ন অঞ্চলের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে ১০ হাজার পরিবার। এদিকে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি।
নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হেক্টর ফসলি জমির ধান ক্ষেত।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মফিজার রহমান বলেন,এই শুষ্ক মৌসুমে এমন বন্যা দেখা আর দেখা যায়নি। গত দুই মাস আগে এ নদীর শুকিয়ে গিয়েছিল আজ নদীতে ভরপুর পানি অনেক পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ দৌলা বলেন, উজানে ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাপারের মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া জন্য বলা হচ্ছে এবং ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বিষয়টা আমরা জেনেছি। পানিবন্দি পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সহায়তা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য সহায়তায় ব্যবস্থা করছেন।