জুয়েল খাঁন,সিলেট জেলা প্রতিনিধিঃ
ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সিলেটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা বিধিনিষেধের মধ্যে ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক ছাড়া প্রার্থী হওয়া যাবে না-এটা ছিল আওয়ামী লীগের নির্দেশ। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এ কারণে ১০ প্রার্থীকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। আর বিএনপির নির্দেশ ছিল নির্বাচন বর্জনের।
প্রার্থী হওয়া তো দূরের কথা, ভোট দিতে যেতেও তাদের মানা ছিল। এমন বিধিনিষেধ অমান্য করে দুই দলের ২০ জন নেতাকর্মী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জন আওয়ামী লীগের। ১০ জন বিএনপির। দলীয় মনোনয়ন, প্রতীক না পেলেও ভোটের মাঠে তাদের দাপট ছিল বেশ। নির্বাচনে তাদের কাছে পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। শুধু তাই নয়, টাকার কুমির প্রবাসীরাও ধরাশায়ী হয়েছেন বিদ্রোহীদের কাছে। ফল ঘোষণার পর এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। নাম প্রকাশ না করে জেলা আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, প্রার্থী মনোনয়নের ভুলে এমন ফল হয়েছে। তা না হলে বিভাগের ৪৪ ইউনিয়নের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০টি ইউনিয়নেই নৌকার জয় হতো। কারণ নির্বাচনী ফল অনুযায়ী নৌকা প্রতীকের বিজয়ী ও বিদ্রোহী মিলে ২৯ জন বিজয়ী হয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপে সিলেট বিভাগের চার জেলার ৭ উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন হলেও ফল হয়েছে ৪৩টির। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৯, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১০, স্বতন্ত্র ব্যানারে বিএনপি বিদ্রোহী ১০, স্বতন্ত্র পরিচয়ে জামায়াত ২, একটিতে খেলাফত মজলিস এবং একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের একটি ইউনিয়নের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা ইউনিয়নের ফল সংঘর্ষের কারণে স্থগিত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা সালেহা সুমী বলেন, একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের কারণে ফল স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।ফল অনুসারে, সিলেট জেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দুটিতে এই বিদ্রোহী প্রার্থী, ৫টিতে স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিএনপির প্রার্থী, ১টিতে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এবং ১টিতে জামায়াতের প্রার্থী (স্বতন্ত্র) জয় পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জের ১৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৬টিতে। বাকিগুলোর মধ্যে ৩টিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী, আরেকটিতে জামায়াত নেতা স্বতন্ত্রের ব্যানারে জয় পেয়েছেন। মৌলভীবাজারের ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন একটিতে। বাকিগুলোর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী দুটিতে এবং বিএনপির দুই নেতা দুটিতে জয় পেয়েছেন।
হবিগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে গোলযোগের কারণে ফল স্থগিত করা হয়েছে। বাকি চারটির মধ্যে ৩টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। অপরটিতে জয়ী হয়েছেন বিএনপির এক নেতা।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি প্রবাসীদেরও টপকে গেছেন বিদ্রোহীরা। সিলেট সদরের জালালাবাদ ইউনিয়নে দুজন এবং মোগলগাঁও ইউনিয়নে একজন, বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নে তিনজন, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে একজন ও দেওয়ানবাজার ইউনিয়নে একজন প্রবাসী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন।
তাদের মধ্যে জালালাবাদ ইউনিয়নে ফ্রান্স প্রবাসী জয়নাল আবেদীন ও বাহরাইন প্রবাসী সমছুল হক স্বতন্ত্র হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা কেউই নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের লন্ডনি মো. আমিরুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছেন। এই ইউনিয়নের আরেক লন্ডনি মহিবুল রহমানও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছেন। বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের লন্ডনি আবদুল মতিন বিদ্রোহী (আ’লীগ) প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন। বালাগঞ্জের দেওয়ানবাজার ইউনিয়নে লন্ডনি আওয়ামী লীগ নেতা ছহুল এ মুনিম দলীয় মনোনয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ে হেরেছেন।