মিহিরুজ্জামান জেলা প্রতিনিধ সাতক্ষীরাঃ
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর।লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদ। এই সিডরের আঘাতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৭ জন লোক নিহত হন। তবে নিহতদের পরিবারগুলো সরকারের থেকে পায়নি কোনো স্থায়ী সহায়তা বা কর্মসংস্থান।এতে অভাব অনটনে দুর্বিষহ দিনযাপন করছেন পরিবার গুলো।নিহতরা হলেন উপজেলার মালোপাড়ার গৌর হালদার (৪৮),অজিত হালদার (৪৩) এবং বাউখোলা গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ বিশ্বাস (৫৮)। উপজেলার জাতপুর গ্রামের নূর বেগম (৬০), জালালপুরের ফেলি বিবি (৫৮), টিকারামপুর গ্রামের হাসান গাজী (৫০) এবং মাগুরা বাজারের একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি (২৫)।নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৪ বছর আগে সিডরের আগের দিন দুবলারচর ও আলোরকোলে মাছ ধরতে যান তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। কিন্তু স্বজনদের কাছে আর ফেরা হয়নি তাঁদের।এসব নিহত পরিবারগুলোর অনেকেই না খেয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের খোঁজ এখন কেউ রাখে না।পরিবারগুলো তাই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।সিডরে নিহত তালা সদরের মালোপাড়ার অজিত হালদারের স্ত্রী রিতা হালদার বলেন,সিডর আমার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে কেড়ে নেয়।ওই সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু টাকা এবং সাহায্য পেলেও এখন আর কেউ খোঁজ-খবর নেয় না।দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তিনবেলা দুমুঠো ভাতও জোটে না ঠিকমতো। তাঁদের শিক্ষার খরচ চালাতে পারছি না। বর্তমানে আমি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে মাছ বিক্রির পাশাপাশি অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি।তিনি আরও বলেন, ১৪ বছরের শিশুপুত্র কৃষ্ণ হালদারকে টাকার কারণে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সে বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।এ ছাড়া আমার স্বামীর রেখে যাওয়া ২০ হাজার টাকা ঋণের বোঝার পাশাপাশি বর্তমানে ৪/৫টা এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি শোধ করতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে।এদিকে সিডরে নিহত একই গ্রামের গৌর হালদারের স্ত্রী আরতি হালদার জানান, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।তাঁর স্বামীর প্রায় ২ লাখ টাকা ধার-দেনা রয়েছে।যা শোধ করার জন্য তাঁর তিন ছেলে আবারও সাগরে মাছ ধরতে গেছেন।একই রকম আক্ষেপ করে বলেন সিডরের আঘাতে নিহত অন্যান্য পরিবারগুলো। কিছু পরিবার সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ এবং বিধবা ভাতার কার্ড পেলেও অনেকের ভাগ্যে তাও জোটেনি।সব মিলিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে নিদারুণ কষ্ট ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারগুলো।তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান,আমি কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি। বিষয়টি এখনও জানা নেই।এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে সহযোগিতা করা হবে।