আব্দুর রাজ্জাক কাজল ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রতিনিধি্ঃ
ভূরুঙ্গামারীতে এক শিক্ষক পরিবারের সবকিছু হারিয়ে যাওয়ার বাস্তব গল্প।
আরিফ মাদ্রাসা থেকে ২০১০ সালে এস এস সি তারপর এই এস এসি,জেনারেল থেকে ডিগ্রী পাশ করেন।সে মেধাবী শিক্ষিত ভদ্র ধার্মিক সৎ একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন সবার কাছে। সে পরিবারের উপার্জনের একমাত্র সম্বল ছিল। ডিগ্রী পাস করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন।সে সময় চাকুরীর জন্য বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু টাকা দিয়েও রাখেন। এর মাঝেই চাকুরী না হওয়াতে সে কুড়িগ্রাম রাজারহাট শহরের একটি টাটা শোরুম এ ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেন ১৯ সালের দিকে। সেখানেও সুনামের সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরই মাঝে আরিফের বিয়ের ফুল ফোটে ২০২১ সালের প্রথম দিকে। পরে পারিবারিকভাবে বিয়ের ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন করেন। সংসার জীবনেও দাম্পত্য জীবন ভালোই চলে তিন মাস। এরই মাঝে নিয়তির কি খেলা আরিফের কর্মস্থল রাজারহাট থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে কোম্পানির মালিক সহ পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে রাজারহাট থানায় একটি জিডি করেন। এদিকে স্বামীর অপেক্ষায় থেকে স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রী গত মাসের অক্টোবর ২১ দিকে স্বামী আরিফকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায় বাবার বাড়ি।
বলছিলাম কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বটতলা মোড় পূর্ব বাগভান্ডার গ্রামের সেকেন্দার আলী দ্বিতীয় ছেলে আরিফের কথা।
আরিফের বাবা মা সহ তিন বোন দুই ভাই নিয়ে তার পরিবার। আরিফের বাবার বেশ নামডাক ছিল এলাকায়। হালকা কিছু জায়গা জমিও ছিল।সে বাদে ভাই বোনদের সবারি বিয়ে হয়ে যায় সে সময়। কিছু জায়গা বিক্রি করে আরিফের বড় ভাই আজিজ সেসময় একটি হাইস্কুলে চাকরি নেন শিক্ষক হিসেবে। শিক্ষকতা শুরু করে বড় ভাই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। কিছুদিন পরে ওই ঘরে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করেন নাম রাখা হয় তার মিম।
নিয়তির কি খেলা এরই মাঝে মিমের বয়স যখন সাড়ে তিন বছর সেসময় মিমের বাবা আজিজ মাস্টার স্টক করে মৃত্যুবরণ করেন। ভেঙ্গে পড়েন পরিবারের লোকজন। ঠিক দুই মাসের মাথায় মিমের মা স্বামীর শোক সইতে না পেরে সেও মৃত্যুবরণ করেন।
এ যেন ভুরুঙ্গামারী আকাশ বাতাস গাছগাছালি পশুপাখি থেকে শুরু করে মানুষের কান্নায় ভেসে ওঠে পুরো উপজেলার মানুষ। পুরো উপজেলায় নেমে আসে শোকের ছায়া। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মিমের জীবন।
সেসময় সংসার ও মিমের দায়িত্ব নেন আজিজ মাস্টারের ছোট ভাই আরিফ। মিমের বাবা আজিজ মাস্টার উপজেলার সদর ইউনিয়নের তিলাই হাইস্কুলের শিক্ষকতা করতেন।পরে স্কুল থেকে এবং স্থানীয়রা সুধীজন বিভিন্ন দপ্তর শুভাকাঙ্ক্ষী সবাই মিমের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। সেই সুবাদে আরিফ বাবার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মিমের।মিম এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করেন ঢাকায়।চাচা না থাকায় মিমের পড়াশুনা অনিস্চিত হয়ে পরেছে।
নিয়তির কি খেলা বাবা-মা হারার পর যে চাচা ছিল মিমের অবলম্বন সেই চাচাও আজ অনেকদিন হয়ে গেল নিখোঁজ। সংসারে টানাপড়ায় দিন যাচ্ছে কোনভাবে।
বাবা মা হারা মীম ও আরিফের বয়স্ক বাবা মা মৃত্যুর আগে যেন হারানো ছেলেকে দেখতে পায় এরকমি দোয়া চেয়েছেন আল্লাহ ও এই দুনিয়ার মানুষের কাছে।